পাকস্থলির ক্যান্সার
পাকস্থলির ক্যান্সার কি?
পাকস্থলির ভেতরের প্রাচীরের উপর স্তরের এপিথেলিয়াম শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী থেকে পাকস্থলির ক্যান্সার শুরু হয়। পাকস্থলির যে কোন অংশে এটা হতে পারে (সবচেয়ে বেশী হয় সাইনাস ভেনট্রিকুলি পাইলোরাস এরিয়াতে) এবং পাকস্থলির প্রাচীর ভেদ করে অনেক ভেতরেও প্রবেশ করতে পারে।
পাকস্থলির ক্যান্সারের হারঃ
পাকস্থলির ক্যান্সারের বার্ষিক হার প্রায় ০.০০০১৭৬। জাপান এবং ডেনমার্কে এর হার বেশী অন্যদিকে আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়াতে এর হার তুলনামূলক ভাবে কম। মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের এই ক্যান্সার বেশী হয় এবং পুরুষ ও মহিলা ভেদে এর হার হল ৩ঃ১। সাধারণত ৫০-৬০ বছর বয়সীদের এই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশী থাকে।
সাধারণত কি কারণে এই ক্যান্সার হয় ?
১. পরিবেশগত কারন ঃ দেশ এবং পরিবেশ ভেদে এই ক্যান্সার হওয়ার হার বিভিন্ন।
২. খাদ্যাভ্যাস বা ডায়েটঃ মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার বা পচা খাবার, অতিরিক্ত লবনাক্ত মাছমাংস বা সবজি, আচার জাতীয় খাবার, অতিরিক্ত ভাঁজা-পোড়া ইত্যাদি এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
৩. বংশগত কারনঃ গবেষণায় দেখা গেছে যে বংশগত কারনেও এই ক্যান্সার হতে পারে।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাবঃ যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত কম তাদের ক্ষেত্রে এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশী।
পাকস্থলির ক্যান্সারের পূর্বলক্ষণ কি কি?
১. পেট ব্যথাঃ এটি অত্যন্ত সাধারন একটি লক্ষণ এবং প্রথমদিকে অল্প ব্যথা হলেও পরবর্তীতে গ্যাস্ট্রিক এবং আলসারের সাথে এই ব্যথা আরও বাড়তে থাকে।
২. গ্যাস্ট্রিকের জ্বালা পোড়াঃ গ্যাস্ট্রিকের কারণে পেটে প্রচণ্ড জ্বালা পোড়া করে এবং সাময়িক ভাবে এই ব্যথা সেরে যেতে দেখা গেলেও পরবর্তীতে আবার ফিরে আসে।
৩. ক্ষুধামন্দা, অতিরিক্ত ঢেকুর, বদহজমঃ খাবারের পর পর এই লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে।
৪. গাঢ় রঙের কোন খাবার খাওয়া ছাড়াই পায়খানার রঙ অতিরিক্ত গাঢ় হলে অথবা পায়খানার সাথে রক্ত গেলে।
৫. পাকস্থলীর ক্যান্সারের ফলে রোগীরা ঠিক মত খেতে পারেন না ফলে রক্ত শূন্যতা বা অ্যানিমিয়া হতে পারে।
পাকস্থলীর ক্যান্সার নির্ণয়ের কি কি পরীক্ষা আছে?
১. ফিজিক্যাল এক্সামিনেশন
২. ল্যাবরেটোরি এক্সামিনেশন
৩. ইমেইজলজি এক্সামিনেশন
ক. আপার গ্যাসট্রয়েনটেষ্টিনাল এক্স-রে ও ব্যারিয়াম মিল ওপাসিফিকেশন
খ. এনহান্সমেন্ট টাইপ সি.টি.
গ. এম.আর.আই
ঘ. পেট সি.টি.
ঙ. আলট্রা সাউন্ড ইন্সপেকশন
৪.এন্ডওস্কপি এক্সামিনেশন
ক. গ্যাস্ট্রোস্কপি
খ. অ্যাবডোমিনোস্কপি
পাকস্থলীর ক্যান্সারের কি কি চিকিৎসা আছে?
১. সার্জারিঃ প্রাথমিক পর্যায়ের ক্যান্সার রোগীদের জন্য এটাই প্রধান চিকিৎসা।
২. কেমোথেরাপিঃ সার্জারির আগে বা পরে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়।
৩. রেডিওথেরাপিঃ এটিও সার্জারির কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য সার্জারির আগে বা পরে দেওয়া হয়।
পাকস্থলীর ক্যান্সারের চিকিৎসায় ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন এর ব্যবহার ঃ
গবেষণায় প্রমাণিত যে ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন শরীরের ভারসাম্য বজায় রেখে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে । ওয়েস্টার্ন মেডিসিনের সাথে ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিনের ব্যবহার ক্যান্সার চিকিৎসা কে আরও কার্যকর করে তোলে এবং কেমোথেরাপি ও রেডিও থেরাপির মাধ্যমে সৃষ্ট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দূরীকরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ।
রোগীর খাদ্যাভ্যাস কেমন হতে হবে?
১. একবারে বেশী খাবার খাওয়া যাবেনা অর্থাৎ পরিমানে কম কিন্তু বার বার খাবার খেতে হবে।
২. প্রোটিন যুক্ত খাবার এবং যা সহজে হজম হয় যেমন ভাতের মাড়, ডিমের স্যুপ, দুধ ইত্যাদি খেতে হবে।
৩. মিষ্টি এবং চর্বিযুক্ত খাবার কম খেতে হবে।
৪. অতিরিক্ত ঠাণ্ডা, গরম ও মশলা জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।
৫. রক্তশূন্যতা এড়ানোর জন্য মাছ, কলিজা, ফলমূল, শাক সবজি ইত্যাদি বেশী খেতে হবে।
৬. খাবার ভালভাবে চিবিয়ে এরপর আস্তে আস্তে গিলে খেতে হবে।
আমরা কি ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকি?
বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যেসব হসপিটাল এ মাল্টিপল ডিসিপ্লিন থাকে যেমন অঙ্কসার্জারি , অঙ্কলজি, প্যাথলজি, ইমেইজলজি ইত্যাদি সহ এনেস্থেশিয়ার ডাক্তার এবং অভিজ্ঞ নার্স থাকে তাদের চিকিৎসা ব্যাবস্থা অত্যন্ত উন্নত, সাশ্রয়ী, উপযুক্ত ও কার্যকর হয়।
মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংজৌ এর “ওয়ান স্টপ” মেডিকেল সিস্টেম এ রয়েছে একাধিক মেডিকেল বিভাগের সমন্বয় যা রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোন সময় এ রোগ নির্ণয়ের সুবিধা প্রদান করে। এর ফলে ডায়াগনোসিস বা রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীকে কোন ঝামেলায় পড়তে হয়না। সুতরাং একদিকে এটি যেমন উন্নত ও আন্তরিক সব ধরনের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে তেমনি অন্য দিকে এটি চিকিৎসার কার্যকারিতা ও মান নিশ্চিত করে। ডাক্তারদের সাথে রোগীরা যাতে সহজে যোগাযোগ করতে পারেন সেজন্য এখানে বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে যেমন অনলাইন কন্সালটেশন, ই-মেইল, টেলিফোন কনভারসেশন, ফেইস টু ফেইস বা সরাসরি কন্সালটেশন এর সুবিধা। একজন ক্যান্সার রোগীকে এই ধরনের সেবা বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে থাকে। এখানকার মেডিকেল টিম বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নার্স, পুষ্টিবিদ,অনুবাদক প্রভৃতির সমন্বয়ে গঠিত যাতে যে কোন দেশের যে কোন পর্যায়ের রোগীকে আন্তরিক সেবা দেয়া সম্ভব হয়। চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে ডাক্তার এবং হসপিটাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনরূপ বাধা না থাকায় রোগীরা আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।
scrollTop