স্কীন ক্যান্সার
স্কীন ক্যান্সার কি ?
স্কীন ক্যান্সার হল একধরনের ম্যালিগন্যান্ট টিউমার যা ত্বকে হয় । শরীরের যে সব অংশ উন্মুক্ত থাকে যেমন মুখ, গলা, হাত, পিঠ ইত্যাদি অংশে সাধারণত এই ক্যান্সার হয়। এসব উন্মুক্ত ত্বকে এই ক্যান্সার হওয়ার হার প্রায় ৮১.১% ।
কাদের বেশী হয় ?
৩০-৫১ বছর বয়সে সাধারণত এই ক্যান্সার হওয়ার ঝুকি বেশী থাকে। পুরুষ এবং মহিলা ভেদে এর অনুপাত ২ঃ১। শ্বেত বর্ণের অধিকারিদের এই ক্যান্সার বেশী হয়।
স্কীন ক্যান্সারের লক্ষণ কি কি ?
১) স্কীন কালারঃ ত্বকে বিভিন্ন বর্ণের সংমিশ্রণ দেখা দেয় যেমন বাদামী, কালো, লাল, সাদা, নীল ইত্যাদি।
২) ত্বকের উপরিভাগঃ চামড়ার উপরিভাগ খসখসে হয়ে উঠে যেতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে তরল জাতীয় কিছুর নির্গমন হতে পারে।
৩) শরীরের উপরিভগের ত্বকে এডিমা বা তৈলশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
৪) অস্বাভাবিক অনুভূতি যেমন চুলকানি, জ্বালা-পোড়া ইত্যাদি অনুভূত হতে পারে।
নিজে কিভাবে পরীক্ষা করবেন?
১) হাতের করতল, আঙ্গুল, বাহু ইত্যাদির চামড়া পরীক্ষা করতে কনুই ভাঁজ করে নিজেই দেখতে হবে যে উপরের কোন লক্ষণ দেখা যায় কিনা।
২) শরীরের বহির্ভাগ যেমন মুখ, গলা, বুক, পেট ইত্যাদির ত্বক পরীক্ষা করা।
৩) হাত উঁচু করে শরীরের দুই পাশের চামড়াও পরীক্ষা করতে হবে।
৪) আয়নার সামনে দাড়িয়ে শরীরের পেছনের অংশের চামড়াও পরীক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে অন্য কারো সাহায্য নেয়া যেতে পারে।
৫) চিরুনি দিয়ে আঁচড়াবার সময় লক্ষ্য করতে হবে মাথার ত্বকে অস্বাভাবিক কোন কিছু অনুভূত হয় কিনা।
৬) পা, পায়ের পাতা, আঙুল ইত্যাদিও পরীক্ষা করতে হবে এবং ত্বকে অস্বাভাবিক কোনকিছু লক্ষ্য করা মাত্রই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
কাদের এই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশী থাকে ?
১) যাদের আউটডোর একটিভিটিজ বেশী থাকে অর্থাৎ বেশির ভাগ সময় ঘরের বাইরে থাকতে হয়।
২) পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অন্তত দুই জন বা তার বেশী কারো এই ক্যান্সার থাকলে।
৩) যাদের চুল লাল বা সোনালী বর্ণের।
৪) যাদের চামড়া অতিরিক্ত স্পর্শকাতর বা সহজে দাগ পড়ে যায়।
৫) ছোটবেলায় অতিরিক্ত সানবার্ন হয়ে থাকলে।
৬) যারা পিচ, আলকাতরা, মিনারেল অয়েল ইত্যাদির সংস্পর্শে কাজ করেন।
কিভাবে স্কীন ক্যান্সার নির্ণয় করা হয়ঃ
যেহেতু স্কীন ক্যান্সার শরীরের বাহ্যিক অংশে হয় সুতরাং এক্ষেত্রে প্রথম করনীয় কাজটি হল কোন লক্ষণ দেখা মাত্রই ডাক্তারের কাছে যাওয়া। অভিজ্ঞ ডাক্তার লক্ষণ দেখেই বুঝতে পারবেন এবং ক্যান্সার সন্দেহ হলে টিউমার থেকে টিস্যু নিয়ে বায়প্সি করতে দিবেন।
স্কীন ক্যান্সারের চিকিৎসাঃ
১) স্কীন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা হল সার্জারি কেননা সার্জারির মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ অপসারণ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
২) কেমোথেরাপিঃ স্কীন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এটিও অন্যতম চিকিৎসা ব্যবস্থা।
৩) রেডিও থেরাপিঃ দুর্বলতা জনিত কারনে যেসব রোগীদের সার্জারি করা সম্ভব হয় না তাদের ক্ষেত্রে রেডিও থেরাপি হল বিকল্প ব্যবস্থা। রেডিও থেরাপি দেওয়ার ক্ষেত্রে শরীরের স্বাভাবিক টিস্যুগুলো যাতে ক্ষতি গ্রস্থ না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
৪) সূক্ষ্ম আক্রমণকারী থেরাপিঃ এটি ট্র্যাডিশনাল সার্জারি এবং কেমোথেরাপির ঘাটতি সমূহ পূরণ করে। এই থেরাপি ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করার পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও বাড়িয়ে দেয় এবং পুনরায় ক্যান্সার ফিরে আসাকে প্রতিরোধ করে। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি সার্জারির জটিলতা মুক্ত এবং কোন ধরনের রক্তপাত নেই।
স্কীন ক্যান্সার চিকিৎসায় ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন ব্যবহারঃ
বহু বছরের গবেষণায় দেখা গেছে টি.সি.এম. বা ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন মানুষের শরীরকে আরও বলবৎ করে এবং শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার মাধ্যমে ক্যান্সার চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।এছাড়াও এটি অ্যান্টি-ক্যান্সার হিসেবেও কাজ করে। ওয়েস্টার্ন মেডিসিন এর সাথে চাইনিজ মেডিসিন এর ব্যবহার চিকিৎসা কে আরও কার্যকর করে তোলে। এছাড়াও রেডিও থেরাপি এবং কেমোথেরাপির পর শরীরে জমে থাকে ক্ষতিকর পদার্থ দূরীকরণেও এটি সাহায্য করে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও বারিয়ে দেয় ফলে রোগীর জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।
স্কীন ক্যান্সারের রোগীকে কি ধরনের খাবার খেতে হবে?
১) সার্জারির পর রোগী অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েন এবং শরীরের রক্তও কমে যায় সেজন্য যে সব খাবার শরীরে রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে যেমন ফলমূল, চাইনিজ খেজুর, গাজর ইত্যাদি খেতে হবে।
২) রেডিও থেরাপির কারণে শরীর থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তরল কমে যায়। এই ঘাটতি পুরনের জন্য প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল যেমন পালংশাক, লেটুস, সদা চাইনিজ নাশপতি, কলা, আঙ্গুর ইত্যাদি খতে হবে।
৩) কেমোথেরাপির পরবর্তী খাবারঃ কেমোথেরাপির পর শরীর অত্যন্ত দুরবল হয়ে পড়ে এজন্য বিশেষ কিছু খাবার যেমন আখরোট,বাদাম,মাশরুম,বার্লি ইত্যাদি খেতে হবে।
৪) ত্বকের পরিচর্যা পদ্ধতিঃ
১) রোদ লাগানো যাবেনা।
২) কোন ধরনের লক্ষণ দেখা মাত্রই পরবর্তী পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে যেতে হবে।
৩) ত্বকের ক্যান্সার খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ে এ কারনে শরীরের যে সব অংশের ত্বক সহজে দেখা যায় না যেমন কানের পেছনের ত্বক, মাথার ত্বক ইত্যাদি যথাযথ ভাবে পরীক্ষা করতে হবে।
আমরা কি ধরনের সেবা দিয়ে থাকিঃ
বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যেসব হসপিটাল এ মাল্টিপল ডিসিপ্লিন থাকে যেমন অঙ্কসার্জারি , অঙ্কলজি, প্যাথলজি, ইমেইজলজি ইত্যাদি সহ এনেস্থেশিয়ার ডাক্তার এবং অভিজ্ঞ নার্স থাকে তাদের চিকিৎসা ব্যাবস্থা অত্যন্ত উন্নত, সাশ্রয়ী, উপযুক্ত ও কার্যকর হয়।
মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংজৌ এর “ওয়ান স্টপ” মেডিকেল সিস্টেম এ রয়েছে একাধিক মেডিকেল বিভাগের সমন্বয় যা রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোন সময় এ রোগ নির্ণয়ের সুবিধা প্রদান করে। এর ফলে ডায়াগনোসিস বা রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীকে কোন ঝামেলায় পড়তে হয়না। সুতরাং একদিকে এটি যেমন উন্নত ও আন্তরিক সব ধরনের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে তেমনি অন্য দিকে এটি চিকিৎসার কার্যকারিতা ও মান নিশ্চিত করে। ডাক্তারদের সাথে রোগীরা যাতে সহজে যোগাযোগ করতে পারেন সেজন্য এখানে বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে যেমন অনলাইন কন্সালটেশন, ই-মেইল, টেলিফোন কনভারসেশন, ফেইস টু ফেইস বা সরাসরি কন্সালটেশন এর সুবিধা। একজন ক্যান্সার রোগীকে এই ধরনের সেবা বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে থাকে। এখানকার মেডিকেল টিম বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নার্স, পুষ্টিবিদ,অনুবাদক প্রভৃতির সমন্বয়ে গঠিত যাতে যে কোন দেশের যে কোন পর্যায়ের রোগীকে আন্তরিক সেবা দেয়া সম্ভব হয়। চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে ডাক্তার এবং হসপিটাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনরূপ বাধা না থাকায় রোগীরা আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।
scrollTop