অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার
অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার কি?
অগ্ন্যাশয় ক্যান্সারের দুটি ফাংশন আছে- এন্ডওক্রাইন সেক্রেশন এবং এক্সওক্রাইন সেক্রেশন। এন্ডওক্রাইন সেল থেকে যে ক্যান্সার শুরু হয় তা হল নিউরোএন্ডওক্রাইন টিউমার। এই টিউমারটি খুবই বিরল এবং এর চিকিৎসা পদ্ধতিও অন্যান্য অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার থেকে ভিন্ন। এটি একটি নিম্ন ম্যালিগন্যান্সি বিশিষ্ট টিউমার। অন্যদিকে এক্সওক্রাইন সেল থেকে যে ক্যান্সার শুরু হয় তাকেই আমরা অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার হিসেবে জানি। এই ক্যান্সারে ম্যালিগন্যান্সি খুব বেশী হয়।
বিশ্বে দিন দিন অগ্ন্যাশয় ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সাধারণত মধ্য ও বৃদ্ধ বয়সে এই কান্সার বেশী হয় এবং মহিলাদের তুলনায় পুরুষরা এই ক্যান্সারে বেশী আক্রান্ত হন। এই ক্যান্সারের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বয়স হল ৪০-৬৫। সাধারণত এই কান্সার ধরা পড়ার পর একজন রোগী গড়ে ৫ মাস বেঁচে থাকেন এবং এক্ষেত্রে ৫ বছর অতিরিক্ত বেঁচে থাকার সম্ভাবনা মাত্র ৫ % আর এ কারনেই অগ্ন্যাশয় ক্যান্সারকে “সকল ক্যান্সারের রাজা” বলা হয়। এই ক্যান্সারের চিকিৎসা হিসেবে মাত্র ১৫%-২০% রোগীকে সার্জারি করা সম্ভব এবং সার্জারির পর তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা মাত্র ১০%।
অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার কেন হয়?
এই ক্যান্সারের সুস্পষ্ট কোন কারণ পাওয়া যায়নি তবে নিম্ন লিখিত কারনে এই ক্যান্সার হতে পারে বলে মনে করা হয়-
১) ধূমপান ঃ যারা ধূমপান করেন তাদের এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের থেকে ৩ গুণ বেশী থাকে।
২) ডায়েটঃ অতিরিক্ত ফ্যাট,প্রোটিন ও ক্যালোরি জাতীয় খাবার খেলেও এই ক্যান্সার হতে পারে।
৩) ডায়াবেটিকঃ ডায়াবেটিক এর রোগীদের এই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশী।
৪) ক্রনিক প্যানক্রিয়াটিটিসঃ দীর্ঘদিন ধরে অগ্ন্যাশয় প্রদাহজনিত সমস্যায় ভুগলে এই ক্যান্সার হতে পারে।
১) যাদের বয়স ৪০ এর বেশী এবং যারা অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করেন অর্থাৎ ঘন ঘন ধূমপান,মদ্যপান, অতিরিক্ত চর্বি ও ক্যালোরিযুক্ত খাবার খান তাদের এটি হতে পারে।
২) অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খাওয়ার পর ডায়রিয়া হলে এবং পায়খানার সাথে তেল বের হলে বুঝতে হবে অগ্ন্যাশয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
৩) বংশের কারও ডায়াবেটিক এর হিস্টরি ছাড়াই যদি অল্প বয়সে কারও অপ্রত্যাশিত ভাবে ডায়াবেটিক হয় তাহলে তা অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার নির্দেশ করে। ৫ বছরের বেশী সময় ধরে কারো ডায়াবেটিক থাকলে তার অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের থেকে ১.২ গুণ বেশী থাকে।
অগ্ন্যাশয় ক্যান্সারের লক্ষণঃ
১) মাঝে মধ্যে বিশেষ করে রাতে পেটের উপরের অংশে ব্যথা হয় এবং শ্বাস নিতে প্রচণ্ড কষ্ট হয়।
২) পিত্তাশয়ে পাথর ছাড়াই জন্ডিস হয়।
৩) পাকস্থলীর ক্যান্সারের মতই এই ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও রোগীদের ওজন অতিমাত্রায় হ্রাস পায় এবং হজমে অসুবিধা দেখা দেয়।
৪) হঠাৎ করেই ডায়াবেটিক বেড়ে যাওয়া।
প্রাথমিক পর্যায়ে সার্জারি করা হলে অতিরিক্ত পাঁচ বছর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৭০%-১০০% পর্যন্ত হতে পারে।এ কারনেই কোন লক্ষণ দেখা মাত্রই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার সনাক্তকরণ পদ্ধতিঃ
সাধারণত অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার সন্দেহ হলে প্রথমে সূক্ষ্ম আক্রমণকারী পরীক্ষাগুলো করা হয় যেমন সেরোলজিক টিউমার মার্কার টেস্ট, মল পরীক্ষা ইত্যাদি।এরপর নিশ্চিত হওয়া গেলে তখন অন্যান্য পরীক্ষাগুলো করা হয়।
১) আলট্রা সাউন্ড এক্সামিনেশনঃ এর মাধ্যমে অগ্ন্যাশয় অভ্যন্তরীণ গঠন বোঝা যায় এবং বিলিয়ারি ট্র্যাক্ট এ কোন বাধা আছে কিনা তাও জানা যায়।
২) সি.টি.ঃ এর মাধ্যমে টিউমারের আকার, আকৃতি, অবস্থান ইত্যাদি সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। এছাড়াও লিভারে মেটাস্টাসিস আছে কিনা ও লসিকাগ্রন্থি ফুলে উঠেছে কিনা তাও জানা যায়।
৩) এম.আর.আই ও এম.আর.সি.পি. এক্সামিনেশনঃ অন্য পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সার সনাক্ত
করতে অসুবিধে হলে সেক্ষেত্রে এই পরীক্ষাগুলো করা হয়।
অগ্ন্যাশয় ক্যান্সারের বিভিন্ন পর্যায়ঃ
স্টেজ ১ঃ এই পর্যায়ে ক্যান্সার শুধুমাত্র অগ্ন্যাশয়ে থাকে এবং এক্ষেত্রে চিকিৎসার পর অতিরিক্ত পাঁচ বছর বেঁচে থাকার হার ৩০%।
স্টেজ ২ঃ ক্যান্সার এক্ষেত্রে আশেপাশের টিস্যু গুলোতে ছড়িয়ে পড়ে এবং চিকিৎসার পর অতিরিক্ত পাঁচ বছর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা মাত্র ১০%।
স্টেজ ৩ঃ এই পর্যায়ে রিজিওনাল লিম্ফ নোডে মেটাস্টাসিস হয় এবং গড় বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৮-৯ মাস।
স্টেজ ৪ঃ এই পর্যায়ে ক্যান্সার অন্যান্য প্রত্যঙ্গেও ছড়িয়ে পড়ে এবং গড় বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৩-৬ মাস।
অগ্ন্যাশয় ক্যান্সারের চিকিৎসাঃ
সার্জারিঃ প্যানক্রিয়াটোডুওডেনেকটোমি, পাইলোরাস রেখে প্যানক্রিয়াটোডুওডেনেকটোমি, প্যানক্রিকটোমি, লেফট্ প্যানক্রিয়াস এর সেমি-প্যানক্রিকটোমি ইত্যাদি।
কম্প্রিহেনসিভ ট্রিটমেন্টঃ এতে সার্জারির পাশাপাশি রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি এবং অন্যান্য সাপ্লিমেন্টারী ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়।
চাইনিজ মেডিসিনঃ
বহু বছরের গবেষণায় দেখা গেছে টি.সি.এম. বা ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন মানুষের শরীরকে আরও বলবৎ করে এবং শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার মাধ্যমে ক্যান্সার চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।এছাড়াও এটি এন্টি -ক্যান্সার হিসেবেও কাজ করে। ওয়েস্টার্ন মেডিসিন এর সাথে চাইনিজ মেডিসিন এর ব্যবহার চিকিৎসা কে আরও কার্যকর করে তোলে। এছাড়াও রেডিও থেরাপি এবং কেমোথেরাপির পর শরীরে জমে থাকে ক্ষতিকর পদার্থ দূরীকরণেও এটি সাহায্য করে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও বাড়িয়ে দেয় ফলে রোগীর জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।
অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার রোগীর যত্নঃ
মানসিক পরিচর্যাঃ
১)ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়তে সাহস ও অনুপ্রেরনা যোগানো।
২) মানসিক ও শারীরিক অবস্থার সার্বিক উন্নয়নের জন্য পুনর্বাসন গ্রুপে যোগ দেওয়া যেতে পারে।
শারীরিক পরিচর্যাঃ
১) রোগীর ডায়েট ঠিক হচ্ছে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখা।
২) রেগুলার চেক-আপ করা।
৩) অন্যান্য ট্রিটমেন্টর সাথে চাইনিজ মেডিসিনও ব্যবহার করা যাতে চিকিৎসা আর কার্যকর হয়।
আমরা কি ধরনের সেবা দিয়ে থাকিঃ
বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যেসব হসপিটাল এ মাল্টিপল ডিসিপ্লিন থাকে যেমন অঙ্কসার্জারি , অঙ্কলজি, প্যাথলজি, ইমেইজলজি ইত্যাদি সহ এনেস্থেশিয়ার ডাক্তার এবং অভিজ্ঞ নার্স থাকে তাদের চিকিৎসা ব্যাবস্থা অত্যন্ত উন্নত, সাশ্রয়ী, উপযুক্ত ও কার্যকর হয়।
মডার্ন কান্সার হসপিটাল গুয়াংজৌ এর “ওয়ান স্টপ” মেডিকেল সিস্টেম এ রয়েছে একাধিক মেডিকেল বিভাগের সমন্বয় যা রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোন সময় এ রোগ নির্ণয়ের সুবিধা প্রদান করে। এর ফলে ডায়াগনোসিস বা রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীকে কোন ঝামেলায় পড়তে হয়না। সুতরাং একদিকে এটি যেমন উন্নত ও আন্তরিক সব ধরনের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে তেমনি অন্যদিকে এটি চিকিৎসার কার্যকারিতা ও মান নিশ্চিত করে। ডাক্তারদের সাথে রোগীরা যাতে সহজে যোগাযোগ করতে পারেন সেজন্য এখানে বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে যেমন অনলাইন কন্সালটেশন, ই-মেইল, টেলিফোন কনভারসেশন, ফেইস টু ফেইস বা সরাসরি কন্সালটেশন এর সুবিধা। একজন কান্সার রোগীকে এই ধরনের সেবা বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে থাকে। এখানকার মেডিকেল টিম বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নার্স, পুষ্টিবিদ,অনুবাদক প্রভৃতির সমন্বয়ে গঠিত যাতে যে কোন দেশের যে কোন পর্যায়ের রোগীকে আন্তরিক সেবা দেয়া সম্ভব হয়। চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে ডাক্তার এবং হসপিটাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনরূপ বাধা না থাকায় তারা আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।
scrollTop