মুখের ক্যান্সার
মুখের ক্যান্সার কি?
মুখের ক্যান্সার এক ধরনের ম্যালিগন্যান্ট ক্যান্সার যা ঠোঁট, মুখের তালু,জিহ্বা, মাড়ির হাড়, মৌখিক গলবিল, লালা গ্রন্থি, চোয়াল শোষ এবং মুখের ত্বক আক্রান্ত হবার ফলে হয়ে থাকে।
মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনার হার কত?
বিভিন্ন কারনে মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনার হার নারী এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে শতকরা ১.৪৫ ভাগ থেকে ৫.৬ ভাগ পর্যন্ত হয়।
মুখের ক্যান্সার হবার কারণ কি কি?
১। দীর্ঘদিন ধরে ধূমপানের ফলে।একই সাথে মদ্যপান এবং ধূমপানের ফলে।অনেক ক্ষেত্রে ধূমপান বা মদ্যপান ছাড়াও মাড়িতে ইনফেকশন হবার কারনেও এ ধরনের ক্যান্সার হতে পারে।
২। মুখের অযত্নের ফলে ব্যাকটেরিয়ার গঠন হয় এবং ব্যাকটেরিয়ার আক্রমনেও ধীরে ধীরে আক্রান্ত স্থানে ক্যান্সার দেখা দেয়।
৩। দাঁতের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে কোন ইনফেকশনের কারনে।
৪। অপুষ্টি: ভিটামিন A1 মত উপাদানের অভাব, ভিটামিন B2 এবং ট্রেস উপাদান দস্তা, আর্সেনিক, জীব এর সংবেদনশীলতা মুখের ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
৫। লিউকোপ্লাকিয়া এবং এরিথ্রোপ্লাকিয়া এর ফলেও মুখের ক্যান্সার হয়।
৬। আলট্রাভায়োলেট রে এর কারনে দীর্ঘদিন ধরে যারা খোলা পরিবেশে কাজ করেন তাদের মুখের ক্যান্সার হতে পারে।
৭। লনিজিং রেডিয়েশনের কারনে ডি এন এ এর পরিবর্তন ঘটে মুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে।
৮। ক্রনিক হেপাটাইটিস, সিরোসিস, ভাইরাস ইনফেকশনের ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে এধরনের ক্যান্সার হতে পারে।
মুখের ক্যান্সারের উপসর্গ কি কি?
1. রং পরিবর্তন: শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী এর epithelial কোষ পরিবর্তনের ফলে মৌখিক গহ্বর এর সাদা, বাদামী ও কালো মধ্যে রং পরিবর্তন দেখা গেলে,. বিশেষত যখন শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী রুক্ষ হয়ে যায় এবং ক্যাভিটি লিউকোপ্লাকিয়া এবং এরিথ্রোপ্লাকিয়া হয়।
2. Unhealed ঘাত: মুখের ঘাত সাধারণত দুই সপ্তাহের বেশি হলে,ব্যাথা অনুভূত হলে তা মুখের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে ।
3. সুস্পষ্ট ব্যথা: সাধারণত, মুখের ক্যান্সারে কোন ব্যথা হয়না কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত স্থানে ঘর্ষণ অনুভূতি হয়, যখন স্পষ্ট ব্যথা অনুভূত হয় তখন বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ। রোগীর কান ও গলায় ব্যথা অনুভব হতে পারে।
4. ফোলা লিম্ফ নোডস বা লসিকা: অধিকাংশ মুখের ক্যান্সারের ফলে কাছাকাছি ঘাড় এর লিম্ফ নোডস বা লসিকা আক্রান্ত হয় , লিম্ফ নোডস বা লসিকা ফুলে যেতে পারে।
5. ডাইফাংশন: মুখের ক্যান্সারের ফলে চর্বণ পেশী এবং ম্যান্ডিবুলার আক্রান্ত হয়ে মুখের কার্যকলাপে সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করতে পারে।
মুখের ক্যান্সারের পরীক্ষণঃ
1. মুখ ও ঘাড় পরীক্ষা: ঘাড় পরীক্ষণের ক্ষেত্রে মাথা যতটা সম্ভব পেছন দিকে ঝুঁকিয়ে দেখুন কোন ধরনের অস্বাভাবিকতা অনুভব হয় কিনা। হাতের মাধ্যমে দুই ঘাড়ের দুই পাশ ধরে দেখুন এবং চর্বন গ্রন্থি ধরে দেখুন কোন ধরনের ব্যাথা এবং ঘাড়ের দুই পাশের মধ্যে পার্থক্য অনুভব হয় কিনা।
2. ঠোঁট পরীক্ষা: উভয় ঠোঁট এর বহিঃস্থ পার্শ্ব, অভ্যন্তরে ধরে দেখুন উপড়ে বা নিচের দিকে কোন পার্থক্য অনুভূত হয় কিনা।
3. আঠার পরীক্ষা: আপনার মাড়ির মধ্যে আঙুল রেখের দেখুন পূর্ববর্তী অবস্থায় এবং বর্তমানে মুখের আঠার মধ্যে কোন পার্থক্য অনুভূত হয় কিনা।
4. গণ্ডদেশ পরীক্ষা: মুখ বন্ধ করে দুইপাশ থেকে কানের দিকে টানুন,দুইপাশের থুঁতনিতে ধরে দেখুন কোন অস্বাভাবিকতা অনুভব হয় কিনা।
5. আপনার জিহ্বা পরীক্ষা করুন: আপনার জিহ্বা প্রসারিত করুন,জিহ্বার পৃষ্ঠতল হাতিয়ে দেখুন এরপর জিহ্বা বাম এবং ডান দিকে সঞ্চালন করে দেখুন কোন ক্ষত বা অস্বাভাবিকতা দেখা যায় কিনা।
6. জিহ্বা এর উপরিতল পরীক্ষা করুন।
7. গলবিল এবং তালু পরীক্ষা করুন: মাথা পেছনে নিতে নিতে আপনার মুখ খুলে "অই" বলে দেখুন, গলবিল এবং তালুতে অস্বাভাবিকতা আছে কিনা।
মুখের ক্যান্সারের পরম্পরাগত চিকিত্সা পদ্ধতিঃ
সার্জারিঃ এটি মুখের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে সাধারন চিকিৎসা পদ্ধতি। অবস্থা অনুযায়ী সার্জারি করে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা গ্রহন করা সম্ভব।
কেমোথেরাপিঃ মাথা এবং ঘাড়ের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে সাধারনত এ ব্যবস্থায় চিকিৎসা করা হয় এবং মুখের ক্যান্সার চিকিৎসায় রেডিয়েশনের সহায়ক হিসেবে এটি কাজ করে।
রেডিও থেরাপিঃ মুখের ক্যান্সার চিকিৎসায় সার্জারির সাথে সাথে এটি দেয়া হয় এবং ধীরে ধীরে রোগীর চর্বন শক্তি বাড়ানো, গেলা, কথা বলার ক্ষেত্রে এটি সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
মুখের ক্যান্সারের চাইনিজ পদ্ধতিতে চিকিতসাঃ
চাইনিজ ঔষধ শুধুমাত্র রোগীর মুখের ক্যান্সারেরই চিকিৎসা করেনা, রোগীর দেহের ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকাও পালন করে। কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপির বিষাক্ত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নির্মূল করে রোগীর অবস্থার উন্নতি নিশ্চিত করে। চাইনিজ ভেষজ চিকিৎসা অন্য যে কোন চিকিৎসা পদ্ধতির চেয়ে মুখের ক্যান্সার চিকিৎসায় বেশি কার্যকরী।
মুখের ক্যান্সারের পোষ্ট অপারেটিভ কেয়ারঃ
১। রোগীকে অপারেশনের প্রথম সপ্তাহে শুধুমাত্র তরল খাদ্য দেয়া।
২। ত্বকের রং, তাপমাত্রা, স্থিতিস্থাপকতা যদি কম হয়, ত্বক সবুজাভ রক্তবর্ন ধারন করলে অতিসত্বর ডাক্তার দেখানো উচিৎ।
৩। মুখ, অনুনাসিক গহ্বর, গলবিল দিয়ে শুষ্ক এবং স্বাভাবিক বাতাস চলাচল যাতে করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৪। রোগীর কথা বলতে অসুবিধা হলে, শ্বাসকষ্ট হলে বা হাঁপানি দেখা দিলে ডাক্তার দেখাতে হবে।
মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংজৌ থেকে আরও যেসকল সুবিধা পেতে পারেনঃ এখানে সঠিকভাবে রোগ নির্নয় সহ ডাক্তারি পরামর্শ, সার্জারি, রোগীর চিকিৎসা সুবিধা, অনলাইন পরামর্শ,ডাক্তারের সাথে সরাসরি যোগাযোগ সহ সকল ধরনের সুবিধা প্রধান করা হয়। এখানে যে কোন ধরনের ক্যান্সারের চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীর দিকে বিশেষ নজর রাখা হয়। সারাক্ষন নার্সিং সুবিধা, সঠিক কমিউনিকেশন ব্যবস্থা, ডাক্তারের পর্যবেক্ষনে থাকার ফলে রোগীদের সকল চাহিদা এবং ভালমানের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়।
scrollTop