ফুসফুস কান্সার
ফুসফুস কান্সার কি?
ফুসফুস কান্সার হল একটি বহুল প্রচলিত ম্যালিগন্যান্ট টিউমার যা ফুসফুসে হয়। বেশীর ভাগ ফুসফুস ক্যান্সার শ্বাসনালীর এপিথেলিয়াম এ হয় বলে একে ব্রঙ্কাইয়াল ক্যান্সার বা শ্বাসনালীর ক্যান্সারও বলা হয়।
কাদের এই ক্যান্সার হতে পারে?
গবেষণায় দেখা গেছে প্রায় ৯০% ক্ষেত্রেই এই ক্যান্সার তাদের হয় যারা ধূমপান করেন। তার মানে যারা ধূমপান করেন না তাদের কি এই ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা নেই? আসলে ব্যাপারটা এমন নয়। মডার্ন কান্সার হসপিটাল গুয়াংজৌ দেখেছে যে, এখন পর্যন্ত ফুসফুস ক্যান্সারের প্রকৃত কারণ জানা যায় নি। সুতরাং ধূমপান ই না, এর সাথে আরও তিনটি কারণ জড়িত থাকতে পারে-
১. বায়ু দূষণ।
২.অতিরিক্ত প্রেসার।
৩. পুষ্টির অভাব।
এছাড়াও ভাইরাল ইনফেকশন, মাইকোটক্সিন, টিউবারকুলসিস, ইমিউন ডিসফাঙ্কশন, এন্ডওক্রাইন ডিজঅর্ডার এবং জেনেটিকাল কারনেও ফুসফুস ক্যান্সার হতে পারে।
ফুসফুস ক্যান্সার আক্রান্তের হার?
সাধারণত ৪০ বছর বয়সের পর ফুসফুস ক্যান্সার হওয়ার ঝুকি বেড়ে যায় এবং যাদের বয়স ৬০-৭৯ তাদের এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। পুরুষ এবং মহিলা ভেদে এর হার হল ২ঃ৩ঃ১।
ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষনঃ
১. কফঃ অতিরিক্ত শুকনো কাশি।
২.নিম্ন তাপমাত্রাঃ নিউমোনিয়ার সাথে কারো কারো শরীরের তাপমাত্রা কমে যেতে পারে এবং বুকে ব্যাথাও হতে পারে।
৩.বুকে ব্যাথাঃ ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত বুকে ব্যাথা দেখা যায় না তবে সময়ের সাথে এই ব্যাথা তীব্রতর হতে পারে এবং অন্য স্থানেও হাল্কা ব্যাথা থাকতে পারে।অনেক সময় শ্বাসপ্রশ্বাস এর সাথে ব্যাথা বাড়তে বা কমতে পারে।যদি ব্যাথা সবসময় থাকে তখন বুঝতে হবে প্লুরাতেও ক্যান্সার ছড়িয়েছে।
এছাড়াও ফুসফুস ক্যান্সারের আরেকটি লক্ষণ হল থুতু বা লালার সাথে রক্ত যাওয়া। টিউমারের কারণে কৈশিকনালী ক্ষতিগ্রস্থ হয় একারনে কাশির সময় রক্ত দেখা যেতে পারে। সুতরাং অন্যান্য এভাবে থুতুর সাথে রক্ত দেখা গেলে রোগীদের ফুসফুস ক্যান্সার আছে বলে ধরে নেয়া হয়।
কিভাবে ফুসফুস ক্যান্সার নির্ণয় করা হয়?
১.বুকের এক্সরেঃ প্রাথমিক ভাবে ফুসফুস ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য বুকের এক্সরে এর সাথে ফ্লুরস্কপি, বুকের সম্মুখ এবং পার্শ্বীয় রেডিওগ্রাফ এবং পার্শ্বীয় টমোগ্রাম করা হয়।
২.বুকের সি.টি. স্ক্যানতি এক্ষেত্রে বুকের সি.টি. স্ক্যান এর সাথে সি.টি. এর অধীনে ফুস্ফুসের পারকিউটেনিয়াস বায়প্সি করা হয়।
৩. বায়প্সিঃ বায়প্সি এর মধ্যে রয়েছে মেটাসটাসিস লসিকার বায়প্সি, প্লুরা এর বায়প্সি বক্ষ নিরীক্ষণ। চামড়ার নিচে থাকা মেটাসটাটিক অর্বুদের বায়প্সি, ব্রঙ্কস্কপি এর পরে বায়প্সি, অপারেশনের সময় ফ্রজেন সেকশনের থেরাপি এবং সি.টি. দ্বারা পরিচালিত পারকিউটেনিয়াস লাঙ্গ পাঙ্কচার এসপিরেশন বায়প্সি।
৪.ব্রঙ্কস্কপিঃ এর মাধ্যমে ব্রঙ্কাইয়াল এন্ডওমেম্ব্রেন এবং লুমেন এ কোন অস্বাভাবিক পরিবর্তন থাকলে তা বোঝা যায়। এছাড়াও ব্রঙ্কস্কপি এর অধীনে টিউমারের বায়প্সি করানো যায় অথবা সাইটোলজিক পরীক্ষার জন্য শ্বাসনালী থেকে রস ও নেয়া হয়।
৫.স্পিউটাম মাইটোলজিঃ প্রাথমিক ফুসফুস ক্যান্সারের ক্ষেত্রে অনেক রোগীর লালা বা থুতু পরীক্ষা করেও ক্যান্সার কোষ সনাক্ত করা যায়। স্পিউটাম সাইটোলজি এর দ্বারা কেন্দ্রীয় ফুসফুস ক্যান্সার সফল ভাবে ধরা পড়ার হার ৭০%-৯০% আর প্রান্তস্থ বা পেরিফেরাল ফুসফুস ক্যান্সার এর ক্ষেত্রে এই হার ৫০%। এর অর্থ হল যাদের স্পিউটাম সাইটোলজির দ্বারা ক্যান্সার ধরা পড়ে না তাদের ক্যান্সার আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য অন্য পরীক্ষা করাতে হবে।
ফুসফুস ক্যান্সারের সর্বোত্তম চিকিৎসা কি?
ফুসফুস ক্যান্সারের ট্রিটমেন্ট গুলি হল সার্জারি, রেডিয়েশন থেরাপি, কেমোথেরাপি এবং বিভিন্ন সূক্ষ্ম আক্রমনকারী থেরাপি। যাদের কান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে অর্থাৎ ক্যান্সার কোষ আশেপাশে খুব একটা ছড়ায়নি সেক্ষেত্রে সার্জারি করা হয়। প্রয়োজন হলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সার্জারির পর রেডিওথেরাপি এবং কেমোথেরাপি দেয়া হয়। পরিণত পর্যায়ের ক্যান্সার রোগীদের সার্জারি করার সুযোগ খুব কম থাকে এক্ষেত্রে তাদের জন্য উপযুক্ত হল বিভিন্ন সূক্ষ্ম আক্রমণকারী থেরাপি যেমন আয়োডিন পার্টিকেল ইমপ্লানটেশন, ইন্টারভেনশনাল থেরাপি এবং ক্রাইওথেরাপি। এধরনের রোগীদের জন্য এগুলো হল বহুল ব্যবহৃত থেরাপি কারণ এতে কাটা-ছেঁড়ার প্রয়োজন হয় না এবং রোগী খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উন্নত জীবন যাপন করতে পারেন।
মডার্ন কান্সার হসপিটাল গুয়াংজৌ এর চিকিৎসকরা দেখেছেন এ ফুসফুস ক্যান্সারের চিকিৎসায় সিংগেল বা একক কোন ট্রিটমেন্ট দিয়ে তেমন কোন ভাল ফল পাওয়া যায় না। একসঙ্গে কয়েকটি পৃথক থেরাপি যেমন রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, সার্জারি, ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন, সূক্ষ্ম আক্রমণকারী থেরাপি ইত্যাদির সমন্নয়ের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করা হলে কার্যকর ফল পাওয়া যায়। তবে এই সমন্নয়কৃত চিকিৎসা ব্যাবস্থা নির্ভর করে বিভিন্ন স্টেজ, কোষের ধরন এবং রোগীর শারীরিক অবস্থার উপর।
ফুসফুস কান্সার চিকিৎসায় ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন এর ভূমিকাঃ ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন শরীরের ভারসাম্য বজায় রেখে কান্সারের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও শক্তিশালী করে। মডার্ন কান্সার হসপিটাল গুয়াংজৌ বিভিন্ন আধুনিক চিকিৎসার সাথে ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন ব্যবহার করে যার ফলে ওয়েস্টার্ন মেডিসিন এবং ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন এর সমন্নয় ক্যান্সার চিকিৎসাকে আরও কার্যকর করে তোলে।
চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পূর্বে আপনার করনীয় কি?
ক্যান্সারেরও চিকিৎসা আছে কিন্তু এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হল ভাল হসপিটাল ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের শরণাপন্ন হওয়া। মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংজৌ আপনাকে হসপিটাল নির্বাচনের ব্যপারে সাহায্য করবে। আশাকরি এতে আপনি উপকৃত হবেন।
প্রফেশনাল নাকি নরমাল মেডিকেল ইন্সটিটিউশন?
চিকিৎসার জন্য প্রফেশনাল ক্যান্সার হসপিটালকে নির্বাচন করতে হবে এবং এক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হবে যেমন হসপিটালটিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, আবাসন সুবিধা এবং অন্যান্য আধুনিক সুবিধা আছে কিনা।
ফুসফুস ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের বেসিক ইনফরমেশন জানার ক্ষেত্রেঃ
কোন হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পূর্বে হসপিটালটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।এক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন অথবা টেলিফোন বা অন্যান্য মাধ্যমও ব্যবহার করে খোজ নিতে পারেন। এরপর আপনি যে চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নিবেন একই ভাবে তার সম্পর্কেও জানতে হবে। এর ফলে চিকিৎসকের সাথে আলাপ আলোচনা করতেও আপনার সুবিধা হবে।
চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগে কিছু মেডিকেল রিপোর্ট যেমন সি.টি. স্ক্যান রেকর্ড, ব্লাড টেস্ট রিপোর্ট ইত্যাদি নিয়ে যেতে পারেন। এছাড়াও চিকিৎসকের সাথে কথা বলার সময় আপনার শারীরিক অসুবিধা সমূহ এবং যে ট্রিটমেন্ট নিয়েছেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে হবে এতে করে আপনাকে সঠিক পরামর্শ ও ট্রিটমেন্ট প্ল্যান দিতে চিকিৎসকের সুবিধা হবে।
একটি হাসপাতালে ফুসফুস কান্সার রোগীদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা কেমন হওয়া উচিত?
১. রোগীর জন্য গান শোনার ব্যবস্থা থাকলে ভাল হয় কারণ এতে তিনি মানসিক প্রশান্তি পাবেন।
২. তার জন্য পুষ্টিকর এবং হালকা খাবারের ব্যবস্থা থাকতে হবে। মানে যেসব খাবার খুব সহজে হজম হয় যেমন জাউ ভাত,স্যুপ, বিভিন্ন ফলমূল ও তাজা শাকসবজি ইত্যাদি।
৩. ডাক্তার এবং নার্সের তত্ত্বাবধানে রোগী যাতে কিছু ব্যয়াম করতে পারেন সেই ব্যবস্থাও থাকতে হবে। এতে করে তিনি শারীরিক এবং মানসিক ভাবে ভাল থাকবেন।
৪. পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুরা যাতে রোগীর সাথে দেখা করে তাকে অনুপ্রেরনা ও উৎসাহ দিতে পারেন, একটি আদর্শ হসপিটালে সেই সুযোগও থাকতে হবে।
হসপিটালটিতে কি কি মেডিকেল সুবিধা থাকতে হবে?
বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যেসব হসপিটাল এ মাল্টিপল ডিসিপ্লিন থাকে যেমন অঙ্কসার্জারি , অঙ্কলজি, প্যাথলজি, ইমেইজলজি ইত্যাদি সহ এনেস্থেশিয়ার ডাক্তার এবং অভিজ্ঞ নার্স থাকে তাদের চিকিৎসা ব্যাবস্থা অত্যন্ত উন্নত, সাশ্রয়ী, উপযুক্ত ও কার্যকর হয়।
মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংজৌ এর “ওয়ান স্টপ” মেডিকেল সিস্টেম এ রয়েছে একাধিক মেডিকেল বিভাগের সমন্বয় যা রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোন সময় এ রোগ নির্ণয়ের সুবিধা প্রদান করে। এর ফলে ডায়াগনোসিস বা রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীকে কোন ঝামেলায় পড়তে হয়না। সুতরাং একদিকে এটি যেমন উন্নত ও আন্তরিক সব ধরনের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে তেমনি অন্য দিকে এটি চিকিৎসার কার্যকারিতা ও মান নিশ্চিত করে। ডাক্তারদের সাথে রোগীরা যাতে সহজে যোগাযোগ করতে পারেন সেজন্য এখানে বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে যেমন অনলাইন কন্সালটেশন, ই-মেইল, টেলিফোন কনভারসেশন, ফেইস টু ফেইস বা সরাসরি কন্সালটেশন এর সুবিধা। একজন ক্যান্সার রোগীকে এই ধরনের সেবা বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে থাকে। এখানকার মেডিকেল টিম বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নার্স, পুষ্টিবিদ,অনুবাদক প্রভৃতির সমন্বয়ে গঠিত যাতে যে কোন দেশের যে কোন পর্যায়ের রোগীকে আন্তরিক সেবা দেয়া সম্ভব হয়। চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে ডাক্তার এবং হসপিটাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনরূপ বাধা না থাকায় রোগীরা আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।
scrollTop