লিভার কান্সার
লিভার কান্সার কি?
লিভার এর ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকেই লিভার কান্সার বলা হয় । লিভার ক্যান্সার ২ ধরণের হয়ে থাকে প্রাইমারি লিভার ক্যান্সার এবং ট্রান্সফারড লিভার ক্যান্সার। তবে প্রাইমারি লিভার ক্যান্সার ই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছর বিশ্বের ৬০,০০০০ মানুষ এই ক্যান্সার এ আক্রান্ত হন। আক্রান্তের সংখ্যার দিক দিয়ে এই ক্যান্সারের অবস্থান চতুর্থ এবং মৃত্যু হারের দিক দিয়ে এটি তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশ যেমন ভিয়েতনাম, ফিলিপিন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি লিভার ক্যান্সার এর দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সাধারণত ৫০-৬০ বছর বয়সীরা এই ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হন। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার মহিলাদের তুলনায় ৭-১০ গুণ বেশি । চিকিৎসা প্রযুক্তির প্রভূত উন্নয়নের ফলে লিভার ক্যান্সারের অত্যন্ত উন্নত ও আধুনিক চিকিৎসা বর্তমানে দেয়া সম্ভব।
লিভার ক্যান্সার কেন হয় ?
লিভার ক্যান্সার এর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে এখনও জানা যায়নি তবে নিম্নোক্ত কারণগুলো লিভার ক্যান্সারের জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়ঃ
১) ক্রনিক হেপাটাইসিসঃ ভাইরাল হেপাটাইসিস লিভার কান্সারের সাথে সম্পর্কিত । প্রায় ৩০% ক্যান্সার রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে তাদের এর আগে ক্রনিক হেপাটাইসিস ছিল এর মধ্যে হেপাটাইসিস বি সবচেয়ে কমন।
২) সিরোসিসঃ প্রায় ৫০%-৯০% ক্ষেত্রেই দেখা যায় লিভার কান্সারের রোগী সিরোসিস এ ভুগে থাকেন। সুতরাং ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্য লিভার সিরোসিস এর রোগীদের নিয়মিত হাসপাতালে চেক-আপ করাতে হবে।
৩) দীর্ঘদিন ধরে দূষিত পানি পান করার ফলেও লিভার ক্যান্সার হতে পারে।
৪) দীর্ঘদিন ধরে ছত্রাক যুক্ত খাবার বা পচা খাবার খেলে লিভার কান্সার হতে পারে।
অতিরিক্ত লবনাক্ত খাবার, ভাঁজা-পোড়া ইত্যাদি খেলে লিভার ক্যান্সার হতে পারে।
উপরোক্ত কারণগুলো ছাড়াও অতিরিক্ত মদ্যপান করলে এবং দূষিত পরিবেশে দীর্ঘদিন থাকার ফলেও লিভার ক্যান্সার হতে পারে।
লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ কি?
১) ক্ষুধা-মন্দাঃ পেটে ব্যাথা, বমি বমি ভাব, বদ-হজম, বমি ইত্যাদি সবসময় লেগে থাকতে পারে।
২) পেটের ডান পাশের উপরিভাগে ব্যাথাঃ পেটের যে অংশে লিভার থাকে সেখানে মাঝেমাঝে বা সবসময় ব্যাথা হতে পারে।
৩) শরীর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে যায় এবং ওজন হ্রাস পায়।
৪) জন্ডিস হতে পারে এবং পেটে পানি জমা হওয়া বা ত্বকে চুলকানি হওয়া প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
৫) মাঝেমাঝে নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।
লিভার ক্যান্সার কিভাবে নির্ণয় করা হয়?
১) আলট্রা-সাউন্ড ডায়াগনোসিসঃ বি- টাইপ আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে টিউমারের আকার,আকৃতি, অবস্থান ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায় এবং এটি ২ সে.মি. বা তার চেয়েও কম আকৃতির ক্ষতকে সনাক্ত করতে পারে। লিভার ক্যান্সার সনাক্তকরনের জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকর এবং প্রচলিত একটি পদ্ধতি।
২) রেডিওস্কপিক হেপাটিক স্কানিংঃ লিভারের আকৃতির পরিবর্তন বা কোন অস্বাভাবিক পরিবর্তন থাকলে এই পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যায়। কিন্তু ৩ সে.মি. এর চেয়ে ছোট টিউমার হলে এটি তা সনাক্ত করতে পারে না।
৩) সি.টি. চেকঃ এর মাধ্যমে প্রারম্ভিক পর্যায়ের টিউমার এমনকি ১ সে.মি. আকৃতির টিউমারও সনাক্ত করা যায়।
৪) এম.আর.আইঃএর সাহায্যে বিনাইন এবং ম্যালিগন্যান্ট টিউমার সনাক্ত করা যায়।
৫) সিলেকটিভ সেলিয়াক অথবা হেপাটিক আরটেরিওগ্রাফি ঃ ৫ সে.মি. থেকে ১ সে.মি. পর্যন্ত টিউমার এর মাধ্যমে সনাক্ত করা যায়। এর মাধ্যমে টিউমারের আকার, আকৃতি, অবস্থান ইত্যাদিও সনাক্ত করা যায়। তবে মূলত ক্যান্সারের ক্ষেত্রে টিউমারের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য এই পরীক্ষা করা হয়।
রক্ত পরিক্ষাঃ লিভার ক্যান্সার নিশ্চিত হওয়ার জন্য নিম্নক্ত পরীক্ষা গুলো অবশ্যই করাতে হবেঃ
১) লিভার ফাংশন টেস্টঃ পরিণত পর্যায়ের ক্যান্সার রোগীদের ক্ষেত্রেই লিভার ফাংকশন এর ড্যামেজ ধরা পড়ে।
২) আলফা-ফটোপ্রোটিন এক্সামিনেশনঃ প্রাইমারি ক্যান্সারের ক্ষেত্রে টিউমারের অবস্থান নিশ্চিত করতে এই পরীক্ষা করা হয়। সুনির্দিষ্ট ভাবে ক্যান্সার সেল সনাক্ত করতে এটি অত্যন্ত কার্যকর একটি পরীক্ষা।
৩)সেরাম ফেরিটিনঃ প্রাইমারি লিভার ক্যান্সার সনাক্ত করার ক্ষেত্রে এটি দ্বিতীয় সেরলজিক পরীক্ষা।
৪)লিভার ক্যান্সারের বিভিন্ন পর্যায়ঃ লিভার ক্যান্সারের পর্যায় নির্ধারণ নিয়ে আন্তর্জাতিক ভাবে কোন মতৈকে পৌঁছানো যায়নি। উদাহরণস্বরূপ ইউ.এস.এ. লিভার ক্যান্সারের পর্যায় নির্ধারণের জন্য টি.এন.এম পদ্ধতি ব্যবহার করে। এক্ষেত্রে “টি” টিউমারের সাইজ “এন” মেটাসটাসিস সিচুয়েশন এবং “এম” ক্যান্সার অন্য কোথাও ছড়িয়েছে কিনা তা নির্দেশ করে। নিম্নে টি.এন.এম. পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত দেয়া হলঃ
টি ১ এর অর্থ হল টিউমারের সাইজ ২ সে.মি. থেকে ছোট এবং কোন মেটাসটাসিস নেই।
টি ২ এর অর্থ হল টিউমারের সাইজ ২ সে.মি. এর চেয়ে ছোট হলেও এটি নিকটস্থ রক্ত-শিরায় প্রবেশ করেছে অথবা সেখানে ২ সে.মি. এর চেয়ে ছোট ক্যান্সারের ২ টি লসিকা গ্রন্থি আছে অথবা ২ সে.মি. এর চেয়ে বড় আকৃতির টিউমার আছে যা রক্তের শিরায় প্রবেশ করেনি।
টি ৩ এর অর্থ হল টিউমারটির আকৃতি ২ সে.মি. এর চেয়ে বড় এবং সেটি রক্তের শিরায় প্রবেশ করেছে অথবা সেখানে ক্যান্সারের একাধিক লসিকা গ্রন্থি আছে যাদের আকৃতি ২ সে.মি. এর চেয়ে ছোট এবং এগুলো রক্তের শিরায় প্রবেশ করেছে অথবা সেখানে ২ সে.মি. এর চেয়ে বড় একাধিক টিউমার আছে।
টি৪ অর্থ হল লিভার এর উভয় ভাগেই টিউমার আছে এবং টিউমারগুলো লিভারের পোর্টাল ভেইন অতিক্রম করেছে।
N0 অর্থ হল লিম্ফ নোডে কোন মেটাসটাসিস নেই। N1 অর্থ হল লিম্ফ নোডে মেটাসটাসিস আছে।
M0 এর অর্থ হল আশেপাশে কোন মেটাসটাসিস নেই আর M1 অর্থ হল মেটাসটাসিস আছে।
স্টেইজ ১ঃ T1N0MO স্টেইজ ১ এর প্রাথমিক পর্যায়ের রোগী।
স্টেইজ ২ঃ T2N0M0 হল স্টেইজ ২ ।
স্টেইজ ৩ঃ T1N1M0, T2N1M0, T3N1MO হল স্টেইজ ৩।
স্টেইজ ৪ঃ T4M0 মানে মেটাসটাসিস ছড়ায়নি।
স্টেইজ ৫ঃ T4M1 মানে মেটাসটাসিস ছড়িয়েছে।
লিভার ক্যান্সার চিকিৎসা পদ্ধতিঃ
১) সার্জারি
২) ইন্টার ভেনশনাল কেমোথেরাপি
৩) রেডিওথেরাপি
৪) টি.সি.এম বা ট্রেডিশনাল চাইনিজ মেডিসিনঃ ট্রেডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন শরীরে ভারসাম্য বজায় রেখে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংজৌ বিভিন্ন আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির সাথে ট্রেডিশনাল চাইনিজ মেডিসিনও ব্যবহার করে যার ফলে পাশ্চাত্য মেডিসিন এর সাথে ট্রেডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন এর সমন্বয় ক্যান্সার চিকিৎসাকে আর কার্যকর করে তোলে।
রোগীর পরিচর্যাঃ
১)রোগীকে সবসময় হাসি খুশি এবং চিন্তা মুক্ত রাখতে হবে।
২) লিভার ক্যান্সারের রোগীরা কোন কারন ছাড়াই সহজে রেগে যেতে পারেন তাই পরিবারের সদস্যদের এটি মানিয়ে নিতে হবে।
৩) অতিরিক্ত চর্বি এবং আঁশযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।
৪) লিভার বা এর আশে পাশে যাতে কোন প্রেসার না পড়ে সেটি খেয়াল রাখতে হবে।
আমরা কি ধরনের সেবা দিয়ে থাকিঃ
বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যেসব হসপিটাল এ মাল্টিপল ডিসিপ্লিন থাকে যেমন অঙ্কসার্জারি , অঙ্কলজি, প্যাথলজি, ইমেইজলজি ইত্যাদি সহ এনেস্থেশিয়ার ডাক্তার এবং অভিজ্ঞ নার্স থাকে তাদের চিকিৎসা ব্যাবস্থা অত্যন্ত উন্নত, সাশ্রয়ী, উপযুক্ত ও কার্যকর হয়।
মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংজৌ এর “ওয়ান স্টপ” মেডিকেল সিস্টেম এ রয়েছে একাধিক মেডিকেল বিভাগের সমন্বয় যা রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোন সময় এ রোগ নির্ণয়ের সুবিধা প্রদান করে। এর ফলে ডায়াগনোসিস বা রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীকে কোন ঝামেলায় পড়তে হয়না। সুতরাং একদিকে এটি যেমন উন্নত ও আন্তরিক সব ধরনের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে তেমনি অন্য দিকে এটি চিকিৎসার কার্যকারিতা ও মান নিশ্চিত করে। ডাক্তারদের সাথে রোগীরা যাতে সহজে যোগাযোগ করতে পারেন সেজন্য এখানে বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে যেমন অনলাইন কন্সালটেশন, ই-মেইল, টেলিফোন কনভারসেশন, ফেইস টু ফেইস বা সরাসরি কন্সালটেশন এর সুবিধা। একজন ক্যান্সার রোগীকে এই ধরনের সেবা বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে থাকে। এখানকার মেডিকেল টিম বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নার্স, পুষ্টিবিদ,অনুবাদক প্রভৃতির সমন্বয়ে গঠিত যাতে যে কোন দেশের যে কোন পর্যায়ের রোগীকে আন্তরিক সেবা দেয়া সম্ভব হয়। চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে ডাক্তার এবং হসপিটাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনরূপ বাধা না থাকায় রোগীরা আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।
scrollTop