লিউকেমিয়া
লিউকেমিয়া কি?
লিউকেমিয়া হল এটি ক্লোনাল ম্যালিগন্যান্ট ডিজিজ যা ব্লাড স্টিম সেলের অস্বাভাবিক বিভাজনের ফলে হয়। রক্তের অসংখ্য শ্বেত কনিকা যা পুনরায় বিভাজনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে এবং কোষ বিভাজনের একটি ভিন্ন স্টেজে অবস্থান করে সেগুলো বোন ম্যারো এবং অন্যান্য রক্ত উৎপাদনকারী টিস্যুতে গিয়ে জমা হয়। এই অস্বাভাবিক টিস্যুগুলো অন্যান্য প্রত্যঙ্গের টিস্যুগুলোতে ছড়িয়ে গিয়ে প্রচুর পরিমাণে অস্বাভাবিক টিস্যু উৎপন্ন করে ফলে সার্বিক রক্ত উৎপাদন প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়। এ কারনেই লিউকেমিয়ার রোগীদের রক্ত শূন্যতা, হেমারেজ, ও ইনফেকশনের মত লক্ষণ দেখা দেয়।
লিউকেমিয়া কতটা প্রচিলত?
সব ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে ২.৫% ই হল লিউকেমিয়া। সার বিশ্বে প্রতি বছর ৪৭,১৫০ জন মানুষ লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হন এবং ২৩,৫৪০ জন প্রতি বছর এই রোগে মারা জান। শিশুদের যে সব ক্যান্সার হয় তার মধ্যে লিউকেমিয়ার অবস্থান শীর্ষে। ০-৪ বছর বয়স এই রোগের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এবং ছেলে-মেয়ে ভেদে এর অনুপাত ৭ঃ৫।
সাধারণত কি কি ধরনের লিউকেমিয়া দেখা যায়?
কোষের অঙ্গসংস্থান সংক্রান্ত সূত্র অনুযায়ী লিউকেমিয়াকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায় ঃ
১) একিউট মাইলোয়েড লিউকেমিয়াঃ এটি রক্তের মাইলোয়েড শ্বেত কণিকার অস্বাভাবিক বর্ধনের ফলে হয়। এর ফলে বোনম্যারোতে অস্বাভাবিক কোষ বিভাজন হয় ফলে রক্তের স্বাভাবিক সেল উৎপাদন প্রক্রিয়া বাধা প্রাপ্ত হয়।
২) ক্রনিক মাইলোয়েড লিউকেমিয়াঃ এটি রক্তের স্টিম সেলের একটি ক্লোনাল বর্ধনশীল রোগ। এর বৈশিষ্ট্য হল বোনম্যারোতে হাইপারপ্ল্যাসিয়া হয়, পেরিফেরাল ব্লাড লিউকোসাইট বেড়ে যায়, এবং প্লীহা বড় হয়ে যায়।
৩) একিউট লিম্ফোব্ল্যাস্টিক লিউকেমিয়াঃ এটি একটি দ্রুত বর্ধনশীল লিউকেমিয়া যা লিম্ফোব্ল্যাস্টিক এর অস্বাভাবিক বর্ধন ও বিভাজনের ফলে অথবা এর বিভাজন বাধাপ্রাপ্ত হলে হয়। এর ফলে প্রচুর অপূর্ণাঙ্গ শ্বেত রক্ত কণিকা উৎপন্ন হয়।
৪) ক্রনিক লিম্ফোসাইটিক লিউকেমিয়াঃ এটি একধরনের ম্যালিগন্যান্ট ক্যান্সার যা লিম্ফ সেলে হয় এবং এর বর্ধন প্রক্রিয়াকে অস্বাভাবিক করে ফেলে। এর ফলে অপূর্ণাঙ্গ লিম্ফ সেল গুলো অস্থি মজ্জাতে গিয়ে জমা হয় এবং রক্তের স্বাভাবিক উৎপাদন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করে ও সম্পূর্ণ শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
লিউকেমিয়া কেন হয়ঃ
অনেকগুলো বিষয় লিউকেমিয়ার জন্য দায়ী বলে মনে করা হলেও এর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে এখনও জানা যায় নি। ইনফেফশন, রেডিয়েশনের সংস্পর্শ , বিভিন্ন কেমিক্যাল এবং বংশগত কিছু কারণ এর জন্য দায়ী বলে অনুমান করা হয়।
লিউকেমিয়ার লক্ষণ কি?
১) অ্যানিমিয়াঃ এক্ষেত্রে দেখা যায় শরীরের রঙ ফ্যাকাশে হয়ে যায়, ঘুম ঘুম ভাব এবং খিঁচুনি হতে পারে।
২) রক্তপাতঃ শরীরের যেকোনো অংশ দিয়ে রক্তপাত হতে পারে তবে সাধারণত নাক, মুখ ও দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে।
৩) লসিকাগ্রন্থিঃ শরীরের লসিকাগ্রন্থি গুলো ফুলে বড় হয়ে যায়। এই লক্ষণটি লিম্ফোব্ল্যাস্টিক লিউকেমিয়া এর ক্ষেত্রে বেশী দেখা যায়।
৪) লিভার এবং প্লীহা বেড়ে যাওয়াঃ ৫০% লিউকেমিয়ার রোগীদেরই লিভার এবং প্লীহা বড় হয়ে যায় এটিও লিম্ফোব্ল্যাস্টিক লিউকেমিয়া এর অন্যতম লক্ষণ।
৫)জ্বর ঃ অনিয়মিত জ্বর আসতে পারে।
৬) স্নায়ুতে জ্বালা পোড়া ঃ স্নায়ুর অভ্যন্তরে চাপ প্রচণ্ড বেড়ে যায় এর ফলে জ্বালা পোড়া এমনকি প্যারালাইসিস ও হতে পারে।
৭) অন্যান্য লক্ষণ ঃ ক্যান্সার সেল শরীরে ছড়িয়ে যাওয়ার পর হজম সংক্রান্ত বিভিন্ন অসুবিধা দেখা দেয়।
লিউকেমিয়া কিভাবে নির্ণয় করা হয়?
১) ব্লাড রুটিন এক্সামিনেশনঃ হাতের আঙুল বা কানের লতি থেকে রক্ত নিয়ে রক্তের শ্বেত ও লোহিত কণিকা পরীক্ষা করা হয়।
২)পেরিফেরাল ব্লাড স্মিয়ারঃ এর মাধ্যমে অস্থিমজ্জাতে কোন অস্বাভাবিক সেল বা অপূর্ণাঙ্গ শ্বেত কণিকা থাকলে সনাক্ত করা যায়।
৩) অস্থিমজ্জার বায়প্সিঃ এর মাধ্যমে বোনম্যারো থেকে কিছু সেল নিয়ে পরীক্ষা করা হয়।
লিউকেমিয়া রোগীর যত্ন ঃ
ডায়েট কেয়ারঃ
১) বেশী করে প্রোটিন ও ক্যালোরি যুক্ত খাবার খেতে হবে।
২) ভিটামিন যুক্ত খাবার খেতে হবে।
৩) যেসব খাবারে অনেক আইরন থাকে সেগুলো খেতে হবে।
লাইফ কেয়ার ঃ
১) নিয়মিত ওষুধ খাওয়া ও হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য যাওয়া।
২) স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা।
৩) ইনফেকশন থেকে বাঁচতে আশে পাশের সব কিছু পশকার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
৪) স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
লিউকেমিয়ার চিকিৎসা কি ?
লিউকেমিয়ার চিকিতসাগুলর মধ্যে রয়েছে কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি, চাইনিজ মেডিসিন ইত্যাদি। অবস্থাভেদে কোন কোন রোগীর ক্ষেত্রে বোনম্যারো প্রতিস্থাপনেরও দরকার হতে পারে।
লিউকেমিয়ার সর্বোত্তম চিকিৎসা কি
সার্জন, প্যাথলজিস্ট, রেডিয়েশন ক্যান্সার এক্সপার্ট, মিনিম্যালি ইনভ্যাসিভ থেরাপির অঙ্কলজিস্ট, অভিজ্ঞ নার্স এবং আন্তরিক নার্সিং ব্যবস্থা, অনুবাদক, কনসালটেশন এক্সপার্ট ইত্যাদির সমন্বয়ে গঠিত মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিম ক্যান্সার রোগীদের অবস্থা পর্যালোচনা করে সর্বোত্তম ট্রিটমেন্ট প্ল্যান প্রদানে সক্ষম। সুতরাং এই চিকিৎসা ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত ও কার্যকরী হয়।
লিউকেমিয়া চিকিৎসায় ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন এর ভূমিকাঃ
বহু বছরের গবেষণায় দেখা গেছে টি.সি.এম. বা ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন মানুষের শরীরকে আরও বলবৎ করে এবং শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার মাধ্যমে ক্যান্সার চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।এছাড়াও এটি এন্টি -ক্যান্সার হিসেবে কাজ করে। ওয়েস্টার্ন মেডিসিন এর সাথে চাইনিজ মেডিসিন এর ব্যবহার চিকিৎসা কে আরও কার্যকর করে তোলে। এছাড়াও রেডিও থেরাপি এবং কেমোথেরাপির পর শরীরে জমে থাকে ক্ষতিকর পদার্থ দূরীকরণেও এটি সাহায্য করে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও বারিয়ে দেয় ফলে রোগীর জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।
আমরা কি ধরনের সেবা দিয়ে থাকিঃ
বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যেসব হসপিটাল এ মাল্টিপল ডিসিপ্লিন থাকে যেমন অঙ্কসার্জারি , অঙ্কলজি, প্যাথলজি, ইমেইজলজি ইত্যাদি সহ এনেস্থেশিয়ার ডাক্তার এবং অভিজ্ঞ নার্স থাকে তাদের চিকিৎসা ব্যাবস্থা অত্যন্ত উন্নত, সাশ্রয়ী, উপযুক্ত ও কার্যকর হয়।
মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংজৌ এর “ওয়ান স্টপ” মেডিকেল সিস্টেম এ রয়েছে একাধিক মেডিকেল বিভাগের সমন্বয় যা রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোন সময় এ রোগ নির্ণয়ের সুবিধা প্রদান করে। এর ফলে ডায়াগনোসিস বা রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীকে কোন ঝামেলায় পড়তে হয়না। সুতরাং একদিকে এটি যেমন উন্নত ও আন্তরিক সব ধরনের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে তেমনি অন্য দিকে এটি চিকিৎসার কার্যকারিতা ও মান নিশ্চিত করে। ডাক্তারদের সাথে রোগীরা যাতে সহজে যোগাযোগ করতে পারেন সেজন্য এখানে বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে যেমন অনলাইন কন্সালটেশন, ই-মেইল, টেলিফোন কনভারসেশন, ফেইস টু ফেইস বা সরাসরি কন্সালটেশন এর সুবিধা। একজন ক্যান্সার রোগীকে এই ধরনের সেবা বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে থাকে। এখানকার মেডিকেল টিম বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নার্স, পুষ্টিবিদ,অনুবাদক প্রভৃতির সমন্বয়ে গঠিত যাতে যে কোন দেশের যে কোন পর্যায়ের রোগীকে আন্তরিক সেবা দেয়া সম্ভব হয়। চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে ডাক্তার এবং হসপিটাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনরূপ বাধা না থাকায় রোগীরা আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।
scrollTop