বাকযন্ত্রের কান্সার
ল্যারিঙ্গিয়াল বা বাকযন্ত্রের ক্যান্সার হল বাকযন্ত্রের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী এর এপিথেলিয়াল টিস্যু থেকে শুরু হওয়া একধরনের ম্যালিগন্যানট টিউমার। সবচেয়ে প্রচলিত বাকযন্ত্রের ক্যান্সারের নাম হল ল্যারিঙ্গিয়াল স্কোয়ামোশ সেল কার্সিনোমা।
কিভাবে বাকযন্ত্রের ক্যান্সার হয়?
মানুষের শরীরে যেসব কান্সার হয় তার মধ্যে ১%-৫% হল বাকযন্ত্র সংক্রান্ত। যেসব ক্যান্সার সচরাচর হয় তার মধ্যে এর অবস্থান তৃতীয়। ন্যাসোফ্যারিঙ্গিয়াল ক্যান্সার বা সাইনাস ক্যান্সার হতে এটি অগ্রসর হয়। সাধারণত ৫০-৬০ বছর বয়সে এবং বিশেষ করে পুরুষদের এই ক্যান্সার বেশি হয়।
বাকযন্ত্র সংক্রান্ত কান্সারের ঝুঁকির কারণগুলো কি?
১. ধূমপানঃ জ্বলন্ত তামাক থেকে এমন কিছু ক্ষতিকর পদার্থ নির্গত হয় যা ক্যান্সারের জন্য দায়ী। ধূমপান সিলিয়ারি মুভমেন্ট কে কমিয়ে বা বন্ধ করে দিতে পারে এবং এর ফলে মিউকাস হাইপারেমিয়া বা এডিমা হয় এবং এপিথেলিয়াল পুরু হয়ে যায় সেই সাথে স্কোয়ামাস দেহকলার অস্বাভাবিক রুপান্তর ঘটে।
২. অতিরিক্ত মদ্যপানঃ শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীতে দীর্ঘমেয়াদী উদ্দীপনার ফলে ক্যান্সার হতে পারে।
৩. ক্রনিক গলদাহের ফলেঃ ক্রনিক গলদাহ বা রেসপিরেটরি প্রদাহ অর্থাৎ দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ থেকেও ক্যান্সার হতে পারে।
৪. বায়ু দূষণঃ বিভিন্ন ক্ষতিকারক গ্যাস যেমন সালফার ডাই অক্সাইড, শিল্প কারখানার গ্যাস ইত্যাদি দীর্ঘমেয়াদী ভাবে গ্রহনের ফলে খুব সহজেই বাকযন্ত্র সংক্রান্ত ক্যান্সার হতে পারে।
৫. ভাইরাল ইনফেকশনঃ বিভিন্ন ভাইরাস মানুষের শরীরে অস্বাভাবিক কোষ বিভাজনের জন্য দায়ী যেমন HPV16 এবং HPV18। এসব ভাইরাল ইনফেকশনের কারণেও ক্যান্সার হতে পারে।
৬. ক্যান্সার পূর্ববর্তী ক্ষতঃ ল্যারিঙ্গিয়াল কেরাটোসিস এবং বিনাইন বাকযন্ত্র সংক্রান্ত টিউমার সমূহ যেমন ল্যারিঙ্গিয়াল প্যাপিলোমা পরবর্তীতে ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে।
৭. তেজস্ক্রিয় রশ্মিঃ তেজস্ক্রিয় রশ্মি ব্যবহার করে গলার টিউমারের চিকিৎসা করা হলে পরবর্তীতে সেখানে ক্যান্সার হয়ে যেতে পারে।
৮. সেক্স হরমোনঃ গবেষণায় দেখা গেছে যে, যে সব রোগীরা বাকযন্ত্র সংক্রান্ত ক্যান্সারে আক্রান্ত তাদের এস্ট্রোজেন রিসেপ্টারে পুংলিঙ্গ কোষ বা ম্যাস্কিউলিন সেল এর পরিমান বেশি।
কিভাবে বাকযন্ত্র সংক্রান্ত ক্যান্সারের বিস্তার হয়?
১. সরাসরি বিস্তারঃ উন্নত পর্যায়ের বাকযন্ত্র সংক্রান্ত ক্যান্সারের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে প্রায়ই এটি সাব মিউকোসাতে ছড়িয়ে পড়ে।
২.লসিকা গ্রন্থির মাধ্যমে স্থানান্তরঃ বাকযন্ত্র সম্বন্ধীয় ক্যান্সার সাধারণত ঘাড়ের অত্যন্ত গভীরে অবস্থিত লসিকা গ্রন্থি হয়ে ক্যারোটিড ধমনী এর উরু সন্ধিস্থলে পৌছায় এবং সেখান থেকে গলার অভ্যন্তরীণ শিরা সমূহের মাধ্যমে উপরিক বা অধস্তন লিম্ফ নোডস্ বা লসিকা গ্রন্থির সংযোগস্থল আক্রমণ করে।
৩.দেহ কোষের মাধ্যমে স্থানান্তরঃ এই ক্যান্সার রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে শরীরের অন্যান্য অংশ যেমন ফুসফুস, লিভার, কিডনি, হাড় ইত্যাদিতে ছড়িয়ে পড়ে।
কিভাবে এই ক্যান্সার নির্ণয় করা যায়?
১. ঘাড় পরীক্ষা।
২.ল্যারিঙ্গোস্কপি
৩. ইমেইজিং পরীক্ষা
i) এক্স রে পরীক্ষা
ii) সি.টি. /এম.আর.আই পরীক্ষা।
iii) আলট্রসাউন্ড টমোস্ক্যান
বাকযন্ত্র সংক্রান্ত ক্যান্সার চিকিৎসায় ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন এর ভূমিকাঃ
ট্রেডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন শরীরে ভারসাম্য বজায় রেখে কান্সার এর বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। মডার্ন কান্সার হসপিটাল গুয়াংজৌ বিভিন্ন আধুনিক ক্যান্সার প্রযুক্তির সাথে ট্রেডিশনাল চাইনিজ মেডিসিনও ব্যবহার করে যার ফলে পাশ্চাত্য মেডিসিন এর সাথে ট্রেডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন এর সমন্বয় কান্সার চিকিৎসাকে আরও কার্যকর করে তোলে। ক্যান্সার চিকিৎসায় চাইনিজ মেডিসিন বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা হয় যেমন শরীরের অভ্যন্তরে শিরা বা ধমনীর মাধ্যমে প্রবেশ করিয়ে, ইনহেইলার হিসেবে, আকু পয়েন্টে ইনজেকশন থেরাপির মাধ্যমে, ফিজিক্যাল থেরাপির মাধ্যমে প্রভৃতি। এটি ক্যান্সার চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর একটি মডেল হিসেবে বিবেচিত।
বাকযন্ত্রের ক্যান্সারের জন্য প্রচলিত অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি গুলো হলঃ
১.সার্জারিঃ বাকযন্ত্রের ক্যান্সার চিকিৎসায় সার্জারি অগ্রাধিকার প্রাপ্ত। সার্জারি গুলো হচ্ছে টোটাল লারিঙ্গেকটোমি, আংশিক আনুভূমিক লারিঙ্গেকটোমি, আংশিক উলম্ব লারিঙ্গেকটোমি ইত্যাদি। ক্যান্সারের ধরন বিবেচনা করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সার্জারির পদ্ধতি নির্বাচন করেন।
২. রেডিয়েশন থেরাপিঃ এই পদ্ধতি তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যাদের ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে অথবা যাদের শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। অনেক ক্ষেত্রে সার্জারির পূর্বেও এটা দেওয়া হয়। রেডিয়েশন থেরাপির পরেও রোগীর বাকযন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতা অব্যহত থাকে।
৩. কেমোথেরাপিঃ যে সব রোগীদের সার্জারি করার সুযোগ নেই এবং যাদেরকে রেডিওথেরাপিও দেওয়া যাবে না তাদের জন্য কেমোথেরাপি।
৪. সূক্ষ্ম আক্রমণকারী থেরাপিঃ বিভিন্ন ধরনের সূক্ষ্ম আক্রমণকারী থেরাপি যেমন থার্মোথেরাপি , ক্রাইওসার্জারি, ইন্টারভেনশনাল থেরাপি, ফটোডায়নামিক থেরাপি ইত্যাদি।এগুলো রোগীদের বাকযন্ত্রের কার্যকারিতা অব্যহত রেখে শুধুমাত্র তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত পাঁচ বছর বেঁচে থাকার হার এবং বাকযন্ত্রের কার্যকারিতা স্বাভাবিক থাকার হার উভয়ই ৭০%
মডার্ন ক্যান্সার হসপিটালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে দেখেছেন যে বাকযন্ত্রের চিকিৎসায় মাল্টি ডিসিপ্লিনারি এবং কম্প্রিহেনসিভ ট্রিটমেন্ট একত্রে ব্যবহার করলে সব থেকে ভাল ফল পাওয়া যায়। এসকল ট্রিটমেন্ট এর মধ্যে রয়েছে সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি, চাইনিজ মেডিসিন, বিভিন্ন সূক্ষ্ম আক্রমণকারী থেরাপি প্রভৃতি।
রোগীর শারীরিক অবস্থা, রোগের ধরণ এবং পর্যায় ইত্যাদি বিবেচনা করে এসকল থেরাপি দেওয়া হয়।
অপারেশনের পর রোগীদের কি কি যত্ন নিতে হবে?
১. জ্ঞান ফেরার পর রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস এর সুবিধার্থে এবং অপারেশনের বর্জ্য পদার্থ বের করার সুবিধার্থে তাকে হেলান দিয়ে শোয়াতে হবে।
২.ব্যথা কমানোর জন্য তার গলার কাছে বরফ দেওয়া যেতে পারে।
৩. চামড়ায় যাতে টান না লাগে এবং ড্রেসিং প্রক্রিয়া যাতে স্বাভাবিক থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। রোগীকে চোখে চোখে রাখতে হবে এবং প্রতিদিন কি পরিমাণ বর্জ্য পদার্থ নির্গত হচ্ছে তারও রেকর্ড রাখতে হবে। কোন অসুবিধার সৃষ্টি হলে সাথে সাথে ডাক্তারকে জানাতে হবে।
আমরা কি ধরনের সেবা দিয়ে থাকি?
বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যেসব হসপিটাল এ মাল্টিপল ডিসিপ্লিন থাকে যেমন অঙ্কসার্জারি , অঙ্কলজি, প্যাথলজি, ইমেইজলজি ইত্যাদি সহ এনেস্থেশিয়ার ডাক্তার এবং অভিজ্ঞ নার্স থাকে তাদের চিকিৎসা ব্যাবস্থা অত্যন্ত উন্নত, সাশ্রয়ী, উপযুক্ত ও কার্যকর হয়।
মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংজৌ এর “ওয়ান স্টপ” মেডিকেল সিস্টেম এ রয়েছে একাধিক মেডিকেল বিভাগের সমন্বয় যা রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোন সময় এ রোগ নির্ণয়ের সুবিধা প্রদান করে। এর ফলে ডায়াগনোসিস বা রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীকে কোন ঝামেলায় পড়তে হয়না। সুতরাং একদিকে এটি যেমন উন্নত ও আন্তরিক সব ধরনের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে তেমনি অন্য দিকে এটি চিকিৎসার কার্যকারিতা ও মান নিশ্চিত করে। ডাক্তারদের সাথে রোগীরা যাতে সহজে যোগাযোগ করতে পারেন সেজন্য এখানে বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে যেমন অনলাইন কন্সালটেশন, ই-মেইল, টেলিফোন কনভারসেশন, ফেইস টু ফেইস বা সরাসরি কন্সালটেশন এর সুবিধা। একজন ক্যান্সার রোগীকে এই ধরনের সেবা বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে থাকে। এখানকার মেডিকেল টিম বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নার্স, পুষ্টিবিদ,অনুবাদক প্রভৃতির সমন্বয়ে গঠিত যাতে যে কোন দেশের যে কোন পর্যায়ের রোগীকে আন্তরিক সেবা দেয়া সম্ভব হয়। চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে ডাক্তার এবং হসপিটাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনরূপ বাধা না থাকায় রোগীরা আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।
scrollTop