কিডনি ক্যান্সার
কিডনি ক্যান্সার কি?
কিডনি ক্যান্সার একধরনের ম্যালিগ্ন্যান্সি যা ইউরিনিফেরাস টিউবল এর ইপিথেলিয়ামে শুরু হয় বা রেনাল প্যারেঙ্কিমা থেকে শুরু হয়। এটি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং নানা উপসর্গ দেখা দিতে থাকে । প্রাথমিক ধাপে কিডনির টিস্যুতে মেটাস্ট্যাসিস ছড়ায় এর পর তা ধীরে ধীরে শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিকশিত হয়।
কিডনি ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা কত?
ইউরিনারি সিস্টেম এর সাধারন ক্যান্সার গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। ম্যালিগ্ন্যান্সি টিউমারের কারনে ৩%-৬% ক্যান্সার হয়ে থাকে। পুরুষ এবং মহিলাদের আক্রান্ত হবার অনুপাত ২:১ । ৫০-৭০ বছর বয়সের মধ্যে এই ক্যান্সার হয়ে থাকে।
কিডনি ক্যান্সার থেকে সেরে ওঠার সম্ভাবনা কত?
কিডনি ক্যান্সার থেকে সেরে ওঠার সম্ভাবনা অনেক কারনের উপর নির্ভর করে। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যারা পাঁচ বছরের মধ্যে কিডনি ফেলে দেন তাদের ক্ষেত্রে সেরে ওঠার সম্ভাবনা ৩৫%-৪০%, ১০ বছরের মধ্যে ফেলে দিলে ১৭%-৩০%। এসব রোগীদের nephrectomy পরে মেটাস্ট্যাসিস ২০-৩০ বছর পর্যন্তও ধীরে ধীরে ছড়াতে পারে।
কিডনি ক্যান্সারের কারণ কি কি?
কিডনি ক্যান্সারের প্রকোপ খুব বেশি হবার কারনে এর সঠিক কারণ নির্দেশ করা কঠিন। এর ফলে অনেক ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকে।
১। ধূম্পায়ীঃ যেসকল মানুষ অতিরিক্ত ধুমপান করেন বা ফিল্টার ছাড়া বিড়ি সেবন করেন তাদের এ রোগ হবার অনেক বেশি সম্ভাবনা থাকে।
২। উচ্চ রক্তচাপের কারনেও এ রোগ হতে পারে।
৩। যেসকল মানুষ প্রিন্টিং, ড্রাই ক্লিনিং বা পেট্রো কেমিক্যাল প্রসেসিং কাজের সাথে জড়িত তাদের এ রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে।
৪। রেডিয়েশনঃ যেসকল মানুষেরা মাত্রাতিরিক্ত রেডিয়েশনে দুর্বল হয়ে পড়ে তাদের এ ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশি থাকে।
৫। পারিবারিক বা বংশগত কারনেও এটি হতে পারে।
৬। খাবার এবং ঔষধের ত্রুটিপূর্ন সেবনে এটি হতে পারে।
কিডনি ক্যান্সারের উপসর্গঃ
১। সুস্পষ্ট লক্ষণগুলি অনুপস্থিতি - বর্তমানে উপরোক্ত উপসর্গ গুলো 40% ক্ষেত্রে শারীরিক চেক - আপ বা অন্যান্য নৈমিত্তিক পরীক্ষার মধ্যে চিকিত্সাগতভাবে পাওয়া যায়, তবে সুস্পষ্ট লক্ষণ না দেখা গেলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে যাবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কিডনির যেকোণ ধরনের সময়সা দেখা দেবার সাথে সাথে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ।
২। গতানুগতিক কারনঃ হেমাটিউরিয়া, লুম্বার ব্যথা, অ্যাবডোমেনাল টিউমার থাকলে কিডনি টিউমারে আক্রান্ত থাকার সম্ভাবনা বেশি। এবং এটি দ্রুত শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এক বা দুটি উপসর্গই রোগীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
(১) মূত্রের সাথে রক্ত বের হলে রেনাল কোলিক হয়ে রোগী এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হন । সাধারনত ৪০% রোগীই এভাবে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
(২) কিডনি রেট্রোপেরিটোনিয়ামের গভীরে থাকে বলে অ্যাবডোমিনালের ছোঁয়ার বাইরে থাকে। টিউমার বড় হলে একমাত্র তা ছোঁয়া সম্ভব । ১০%-৪০% রোগীর অ্যাবডোমেনাল লাম্ফ ছোঁয়া সম্ভব হয়। এটি কিডনি ক্যান্সারের অন্যতম কারণ।
(৩) কটিদেশীয় ব্যথাঃ টিউমার বড় হলে রেনাল ক্যাপসুলের মধ্যে চাপ বা উত্তেজনা অনুভূত হয় এবং ব্যথা বৃদ্ধি পায় , যার ব্যাপ্তি প্রায় ২০%-৪০%। এই উপসর্গ ঘটলে ডাক্তারের পরামর্শ এবং অবিলম্বে চিকিত্সার জন্য আসা উচিত।
(৪) মেটাস্টিক উপসর্গঃ হাড়ের ব্যথা, ভাঙ্গন, কাশি, হেমোপ্টাইটিস এর উপসর্গ ১০% রোগী হসপিটালে আসেন কিন্তু এগুলোও এই ক্যান্সারের অন্যতম উপসর্গ।
কিডনি ক্যান্সার নির্নয়ের উপায় কি?
ইমেজিং বা ডায়াগনোসিস ই ক্লিনিক্যালি কিডনি ক্যান্সার নির্নয়ের অন্যতম উপায়।
১। ইমেজিং পরীক্ষা
(১) এক্স রেঃ কিডনির অনিয়মিত ক্ষত এবং কটিদেশীয় পরিবর্ধন পরীক্ষণে বা রেনাল ক্যালিসেস এর ব্যাবর্ত লক্ষ্য করতে এক্স রে অন্যতম উপায়।
(২) আলট্রাসাউন্ড এর মাধ্যমে কিডনির সিস্ট এবং ক্যান্সারের আক্রান্ত অংশ গুলো পর্যবেক্ষন করা যায়।
(৩) সি টি স্ক্যানঃ কিডনির আক্রান্ত হবার পরিমাণ, টিউমারের আকার,অবস্থান, ইনফ্লাশন ইত্যাদি জানার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ৯৫% সঠিক তথ্য দিতে পারে।
(৪) এম আর আইঃ কিডনি এবং টিউমারের সিস্ট পরিলক্ষনে এটি ব্যবহৃত হয়। প্যাথলজিক্যাল বায়োপ্সিও সঠিক তথ্য দিতে পারে।
কিডনি টিউমারের চিকিৎসা পদ্ধতিঃ
রোগীর শারীরিক অবস্থা,ক্লিনিক্যাল ট্রিটমেন্ট, ক্যান্সারের ধরনের উপর ভিত্তি করে বিভিন্নভাবে এর চিকিৎসা হতে পারে। যেমনঃ সার্জারি, রেডিও থেরাপি, কেমো থেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি, ইম্যুনু থেরাপি ইত্যাদি।
১। সার্জারিঃ সার্জারির ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করা হয়। র্যািডিক্যাল নেফ্রেক্টমি, আধা নেফ্রেক্টমি ইত্যাদি। রোগীদের জন্য র্যািডইক্যাল নেফ্রেক্টমিই সর্বোত্তম পন্থা।
২। Ar-He cryotherapy – বিগত বছর গুলোতে কিডনি ক্যান্সার চিকিৎসায় অন্যতম এই উপায় অবলম্বন করা হচ্ছে এর ক্ষেত্রে সি টি স্ক্যানের মাধ্যমে অবস্থান নিশ্চিত করে টিউমারকে ফ্রিজ করে ক্যান্সার সেল ধ্বংস করা হয়।
৩। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাব্লেশনঃ এটিও কিডনি ক্যান্সার চিকিৎসার অন্যতম একটি উপায়। ইমেজিং এর মাধ্যমে অবিরতভাবে ক্যান্সার সেল ধ্বংস করার মাধ্যমে এই পদ্ধতিতে ক্যস্নার চিকিৎসা করা হয়।
৪। রেডিও বা কেমোথেরাপিঃ সার্জারির পর এই থেরাপিগুলো রোগীর সার্বিক উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এর থেরাপিউটিক ইফেক্ট এর দ্বারা মডার্ন ক্যান্সার হসপিটালে মিনিম্যালি ইনভেসিভ থেরাপি অবলম্বন করে এই ক্যান্সারের চিকিৎসা করা হয়।
৫। ইম্যুনু থেরাপিঃ রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে এটি ব্যবহার করা হয়।
চীনা ঔষধ থেরাপি -টি সি এমঃ চাইনিজ মেডিসিন এবং পশ্চিমা ভেষজ উপাদানে তৈরি এই থেরাপি গ্রহনের ফলে রোগীর সার্বিক অবস্থার ব্যাপক উন্নতি ঘটে এবং রোগী দ্রুত সেরে উঠতে সক্ষম হয়।
কি ধরনের সহায়তা পাওয়া যাবে?
প্র্যাকটিস প্রমান করে যে ক্লিনিকে পরিসেবা দল,অঙ্কোলজি,রোগবিদ্যা,পেশাদারী নার্স এবং নিয়মানুবর্তিতা ক্যান্সার রোগীর সেবার ক্ষেত্রে সর্বাধিক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। মডার্ন ক্যান্সার হসপিটালের ক্যান্সার চিকিৎসা এবং সেবার ক্ষেত্রে এসকল বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্থা মেনে চলা হয়। উন্নত ডাক্তারি পরামর্শ,অনলাইন পরামর্শ,ই মেইলের মাধ্যমে চিকিৎসা পরামর্শ, মেডিক্যাল টিম গঠন করার মাধ্যমে রোগ নির্নয় করে সঠিক চিকিৎসা সেবা প্রদান এবং বন্ধুসুলভ পরিবেশ সুনিশ্চিত করা হয়।
scrollTop