পিত্তকোষ
পিত্তাশয় ক্যান্সার কি?
পিত্তথলির কোষে জন্মানো ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকে পিত্তাশয় ক্যান্সার বলে। প্রাইমারি পিত্তাশয় ক্যান্সার খুবই বিরল। পুরুষ এবং মহিলা ভেদে এই ক্যান্সার হওয়ার অনুপাত ১ঃ২ অর্থাৎ পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের এটি বেশী হয়, বিশেষ করে যাদের বয়স ৬০ এর বেশী তাদের এই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশী থাকে। এর ভাল কোন চিকিৎসা নেই এবং চিকিৎসার পর অতিরিক্ত পাঁচ বছর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা মাত্র ৩%।
ফুসফুস এবং গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার এর তুলনায় এই ক্যান্সার খুবই কম দেখা যায় তবে সাম্প্রতিক সময়ে এর হার বৃদ্ধি পেয়েছে। পিত্তাশয় ক্যান্সারের পূর্ব লক্ষণগুলো স্পষ্ট না হওয়ায় এটি নির্ণয় করাও বেশ কঠিন এবং ক্যান্সার মধ্য ও পরিণত পর্যায়ে চলে গেলে ভাল চিকিৎসাও দেওয়া সম্ভব হয় না। মধ্য ও পরিনত পর্যায়ের পিত্তাশয় ক্যান্সারের ৮০% রোগীরই এক বছরের মধ্যে মৃত্যু হয়। তবে শুরুর দিকে এই ক্যান্সার সনাক্ত করা গেলে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে সার্জারি করা হলে রোগীর অতিরিক্ত পাঁচ বছর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা প্রায় ৯০% পর্যন্ত হতে পারে। সুতরাং এই ক্যান্সারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ হল প্রাথমিক অবস্থায়ই এটি সনাক্ত করতে পারা।
পিত্তাশয় ক্যান্সার কেন হয়?
পিত্তাশয় ক্যান্সারের আসল কারণগুলো সম্পর্কে এখনও পরিষ্কার জানা যায়নি তবে নিম্নলিখিত কারণগুলো এর জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়ঃ
১) ৫০ এর বেশী বয়সী মহিলা যারা দীর্ঘদিন পিত্তাশয়ের প্রদাহজনিত সমস্যায় ভুগছেন তাদের এই ক্যান্সার হতে পারে।
২) যাদের পিত্তথলির পাথর স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৮ গুন বেশী বড় থাকে তাদের এই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
৩) ক্যালসিফিকেশন বা পিত্তাশয়ের প্রাচীর অতিরিক্ত শক্ত হয়ে গেলে। সাধারণত ৬৫ বা এর বেশী বয়সের মহিলা যারা দীর্ঘদিন যাবৎ পিত্তাশয়ের প্রদাহ জনিত সমস্যায় ভুগছেন তাদের ক্যালসিফিকেশন হয়ে থাকে এবং এক্ষেত্রে ক্যান্সার হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি ২২% পর্যন্ত বেড়ে যায়।
৪) যাদের পিত্তাশয়ের পলিপ এর সাইজ ১০ মি.মি. বা এর চেয়ে বড় তাদের ক্ষেত্রে এই ক্যান্সারের ঝুঁকি ২৩% পর্যন্ত হয়ে থাকে।
৫) যারা অতিরিক্ত ঝাল জাতীয় খাবার, ভাজা-পোড়া, আচার জাতীয় খাবার ইত্যাদি বেশী খান এবং ধূমপান ও মদ্যপানের সাথে চর্বি জাতীয় খাবার বেশী খান তাদের এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে।
৬) যেসব মহিলাদের অল্প বয়সে মাসিক শুরু হয় এবং স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী বয়সে মাসিক বন্ধ হয় এবং যারা বেশী সন্তান প্রসব করে তাদের এই ক্যান্সার হতে পারে।
৭) বয়সের তুলনায় বেশী ওজন এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
পিত্তাশয় ক্যান্সারের লক্ষণ কি কি ?
১) পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহঃ বেশীরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা বদহজম ও ঢেকুর জনিত সমস্যায় ভোগেন।
২) পেটের ডান পার্শ্বে ব্যথাঃ পেটের ডান পার্শ্বে হাল্কা ব্যথা বা অনেক সময় প্রচণ্ড ব্যথা হয় এবং এই ব্যথা পেট হতে ঘাড়ের ডান পাশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
৩) পেটের ডান পার্শ্বে ভার অনুভূত হওয়া।
৪) জন্ডিস ও ত্বকে চুলকানিঃ পরিনত পর্যায়ে জন্ডিস দেখা দেয়, শরীরের রঙ হলুদ হয়ে যায় সাথে চুলকানি হয়ে থাকে। রাতে চুলকানি অতি মাত্রায় বেড়ে যায়।
৫) জ্বর এবং দুর্বলতাঃ ২৫% রোগীর ক্ষেত্রেই লক্ষণ হিসেবে জ্বর দেখা দেয় এবং ক্যান্সার পরিণত পর্যায়ে গেলে জ্বরের সাথে শরীর শুকিয়ে যায় এমনকি রক্তশূন্যতাও হতে পারে।
উপরক্ত লক্ষণগুলো দেখা মাত্রই পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে যেতে হবে। যাদের এই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশী তাদেরকে অবশ্যই নিয়মিত চেক-আপ করতে হবে যাতে ক্যান্সার ধরা পড়া মাত্রই ট্রিটমেন্ট শুরু করা যায়।
পিত্তাশয় ক্যান্সার নির্ণয় পদ্ধতিঃ
১) আলট্রাসনোগ্রাফিঃ এর সাহায্যে পিত্তাশয়ে টিউমারের আকৃতি সম্পর্কে জানা যায়। এছাড়াও ক্যান্সার টিস্যু আছে কিনা বা লিভারে ক্যান্সার ছড়িয়েছে কিনা তাও জানা যায়।
২)সি.টি. স্ক্যানঃ আলট্রাসাউন্ড এক্সামিনেশনের পর ক্যান্সার সন্দেহ হলে সি.টি. এক্সামিনেশন করাতে হবে।
৩) এম.আর.আইঃ লিভারে ক্যান্সার ছড়িয়েছে কিনা তা জানার জন্য এম.আর.আই করাতে হবে, এছাড়াও লক্ষণ হিসেবে জন্ডিস দেখা দিলেও এম.আর.আই করাতে হবে।
৪) পেট-সি.টি. ঃ এর মাধ্যমে পিত্তাশয়ের টিউমার সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা যায় এবং পিত্তাশয়ের বাহিরেও ক্যান্সার আছে কিনা তাও সনাক্ত করা যায়।
৫) ল্যাবরেটোরি এক্সামিনেশনঃ টিউমারের সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য এবং টিউমারের সংখ্যা বেড়েছে কিনা তা দেখার জন্য এই পরীক্ষা করা হয়।
পিত্তাশয় ক্যান্সারের বিভিন্ন ধাপঃ
স্টেজ ১ঃ এই ধাপে ক্যান্সার কোষ শুধু শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীতে থাকে। একে ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায় ও বলা হয়।
স্টেজ ২ঃ এই ধাপে ক্যান্সার কোষ শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী অতিক্রম করে ভেতরে প্রবেশ করে এবং এই পর্যায়ে অপারেশনের পর অতিরিক্ত পাঁচ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ২০%-৩০%।
স্টেজ ৩ঃ এই ধাপে ক্যান্সার পিত্তাশয়ের সম্পূর্ণ প্রাচিরে ছড়িয়ে পড়ে। এক্ষেত্রেও অপারেশনের পর অতিরিক্ত পাঁচ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ২০%-৩০%।
স্টেজ ৪ঃ এই পর্যায়ে ক্যান্সার পিত্তাশয় সংলগ্ন লিম্ফ নোডে ও ছড়িয়ে পড়ে এবং এই পর্যায়ে কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে সার্জারি করা হলেও তেমন কার্যকর ফল পাওয়া যায় না। সার্জারির পর খুব কম সংখ্যক রোগী ই পাঁচ বছর অতিরিক্ত বেঁচে থাকেন।
স্টেজ ৫ঃ এই ধাপে ক্যান্সার অন্যান্য প্রত্যঙ্গ সহ সম্পূর্ণ শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং এরপর রোগী আর এক বছরও পুরোপুরি বাঁচেন না।
পিত্তাশয়ের ক্যান্সার খুবই তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ে সেজন্য এর লক্ষণগুলোর ব্যপারে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে। ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে সার্জারি করা হলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও বাড়ে।
পিত্তাশয় ক্যান্সারের চিকিৎসাঃ
সার্জারিঃ এক্ষেত্রে ৩ ধরনের সার্জারি আছে
১) সাধারন কোলেসিসটেকটোমি
২) সম্প্রসারিত কোলেসিসটেকটোমি
৩) সংলগ্ন প্রত্যঙ্গের আংশিক রিসেকশন
৪) রেডিয়েশন থেরাপিঃ এর সাহায্যে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা যায়।
৫) কেমোথেরাপিঃ ইঞ্জেকশন হিসেবে বা ওরাল কেমোথেরাপি উভয়ই নেয়া যায়।
পিত্তাশয় ক্যান্সার চিকিৎসায় ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিনের ব্যবহার ঃ
বহু বছরের গবেষণায় দেখা গেছে টি.সি.এম. বা ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন মানুষের শরীরকে আরও বলবৎ করে এবং শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার মাধ্যমে ক্যান্সার চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।এছাড়াও এটি অ্যান্টি-ক্যান্সার হিসেবেও কাজ করে। ওয়েস্টার্ন মেডিসিন এর সাথে চাইনিজ মেডিসিন এর ব্যবহার চিকিৎসাকে আরও কার্যকর করে তোলে। এছাড়াও রেডিও থেরাপি এবং কেমোথেরাপির পর শরীরে জমে থাকে ক্ষতিকর পদার্থ দূরীকরণেও এটি সাহায্য করে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও বাড়িয়ে দেয় ফলে রোগীর জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।
আমরা কি ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকি?
বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যেসব হসপিটাল এ মাল্টিপল ডিসিপ্লিন থাকে যেমন অঙ্কসার্জারি , অঙ্কলজি, প্যাথলজি, ইমেইজলজি ইত্যাদি সহ এনেস্থেশিয়ার ডাক্তার এবং অভিজ্ঞ নার্স থাকে তাদের চিকিৎসা ব্যাবস্থা অত্যন্ত উন্নত, সাশ্রয়ী, উপযুক্ত ও কার্যকর হয়।
মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংজৌ এর “ওয়ান স্টপ” মেডিকেল সিস্টেম এ রয়েছে একাধিক মেডিকেল বিভাগের সমন্বয় যা রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোন সময় এ রোগ নির্ণয়ের সুবিধা প্রদান করে। এর ফলে ডায়াগনোসিস বা রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীকে কোন ঝামেলায় পড়তে হয়না। সুতরাং একদিকে এটি যেমন উন্নত ও আন্তরিক সব ধরনের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে তেমনি অন্য দিকে এটি চিকিৎসার কার্যকারিতা ও মান নিশ্চিত করে। ডাক্তারদের সাথে রোগীরা যাতে সহজে যোগাযোগ করতে পারেন সেজন্য এখানে বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে যেমন অনলাইন কন্সালটেশন, ই-মেইল, টেলিফোন কনভারসেশন, ফেইস টু ফেইস বা সরাসরি কন্সালটেশন এর সুবিধা। একজন ক্যান্সার রোগীকে এই ধরনের সেবা বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে থাকে। এখানকার মেডিকেল টিম বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নার্স, পুষ্টিবিদ,অনুবাদক প্রভৃতির সমন্বয়ে গঠিত যাতে যে কোন দেশের যে কোন পর্যায়ের রোগীকে আন্তরিক সেবা দেয়া সম্ভব হয়। চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে ডাক্তার এবং হসপিটাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনরূপ বাধা না থাকায় রোগীরা আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।
scrollTop