গর্ভাশয়ের ক্যান্সার
গর্ভাশয়ের ক্যান্সার কি?
স্ত্রী লিঙ্গের গর্ভাশয়ের পথে জন্মানো ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকে গর্ভাশয়ের ক্যান্সার বলা হয়। এটি সাধারণত ৫০ বছর বা এর কাছাকাছি বয়সের মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। যেসব মহিলা বিবাহিত বা অল্প বয়সে সন্তান জন্ম দেন অথবা HPV ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত তাদের ক্ষেত্রে এই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। আজকাল অল্প বয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রেও এই ক্যান্সার দেখা যায়।
গর্ভাশয়ের কান্সারে মৃত্যুর হার কেমন?
স্ত্রী লিঙ্গ সম্পর্কিত ক্যান্সারের মধ্যে গর্ভাশয়ের ক্যান্সারের অবস্থান দ্বিতীয়। প্রতিবছর বিশ্বের প্রায় ৫৩,০০০ মহিলা এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হন যার মধ্যে ৮৫% ই বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশের অধিবাসী।
সারা বিশ্বে প্রতি বছর ৭৬,০০০জন বিভিন্ন ক্যান্সারে মারা যান যা কিনা বিশ্বজুড়ে মোট মৃত্যু হারের ১৩% এবং এই ৭৬,০০০ জনের মধ্যে ২৭,০০০ জনই গর্ভাশয়ের ক্যান্সারে মারা যান যার মধ্যে ৮৮% মৃত্যুই হয় বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশ গুলোতে।
কেন গর্ভাশয়ের ক্যান্সার হয় ?
৭০%সার্ভিকাল ক্যান্সার হওয়ার কারণ হল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতির জন্য দায়ী HIV ভাইরাস । এছাড়াও ধূমপান এবং অন্যান্য কারণও এর সাথে জড়িত । অন্যান্য কারণ গুলোর মধ্যে রয়েছে ক্লেমিডিয়া ইনফেকশন , অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস , অতিরিক্ত হরমোনের মেডিসিন সেবন , অতিরিক্ত গর্ভনিরোধক বড়ি সেবন ,অল্প বয়সে বিয়ে বা বাচ্চা হলে , অতিরিক্ত সন্তান প্রসব করলে ইত্যাদি । এছাড়াও পরিবারের কারো গর্ভাশয়ের ক্যান্সার এর ইতিহাস থাকলে সে ক্ষেত্রেও এই ক্যান্সার হতে পারে।
গর্ভাশয়ের ক্যান্সারের লক্ষণ কি কি ?
১.অনিয়মিত ঋতুস্রাব বা মেনোপোজের পরেও রক্তপাত হলে ।
২. অতিরিক্ত ঋতুস্রাব বা সাদা স্রাব হলে ।
৩.বার বার পায়খানা হলে বা কোষ্ঠকাঠিন্য হলে।
৪. শরীরের বিভিন্ন অংশে অসহনীয় ব্যথা অনুভুত হলে।
৫. ওজন হ্রাস, রক্ত শূন্যতা, জ্বর ইত্যাদি হলে।
গর্ভাশয় ক্যান্সারের স্ক্রিনিং পদ্ধতিঃ
১. নিয়মিত স্ত্রী রোগ সম্বন্ধিয় পরীক্ষা করালে সহজে এই ক্যান্সার সনাক্ত করা যায়।
২. গর্ভাশয়ে প্রচণ্ড ব্যথা থেকেও এই ক্যান্সার হয় সুতরাং এক্ষেত্রে ব্যথা অনুভূত হলে সাথে সাথে চিকিৎসা গ্রহন করতে হবে।
৩. আগে থেকে এই ক্যান্সারের লক্ষণ সম্পর্কে জানতে হবে যাতে লক্ষণ দেখা মাত্রই চিকিৎসা গ্রহন করা সম্ভব হয়।
গর্ভাশয়ের ক্যান্সার সনাক্তকরন পদ্ধতিঃ
১. গর্ভাশয়ের কোষ পরীক্ষা করাঃ স্ত্রী রোগ সংক্রান্ত পরীক্ষা বা ক্যান্সার সনাক্তকরণ পরীক্ষার আওতায় এটি করতে হবে।
২. আয়োডিন পরীক্ষাঃ ভ্যাজিনোস্কোপির মাধ্যমে গর্ভাশয় পর্যবেক্ষণের জন্য এই পরীক্ষা করা হয়। এই পদ্ধতিতে গর্ভাশয়ের উপরিভাগের শ্লেষ্মা সরিয়ে সরাসরি ২% তরল আয়োডিন গর্ভাশয়ে এবং যোনিজ ঝিল্লীতে লাগানো হয়। যদি এরপর অই অংশের রঙ কোনরূপ পরিবর্তিত হয় তাহলে দ্রুত বায়প্সি করাতে হবে।
৩. বায়প্সিঃ আয়োডিন টেস্টের পর ফলাফল পসিটিভ আসলে সেক্ষেত্রে ওই অংশের কোষ বায়াপ্সি করতে দিতে হবে।
৪. ভ্যাজিনস্কপিঃ এটি সরাসরি ক্যান্সার সনাক্ত করতে পারে না, এর জন্য এর সাথে বায়প্সি এর ও প্রয়োজন হয়।
৫. কোনাইজেশনঃ বায়প্সির মাধ্যমে ক্যান্সার সনাক্ত করতে ব্যর্থ হলে জরায়ুজ সেরভিক্স থেকে কোণ আকারে কোষ কেটে পরীক্ষা করা হয়।
গর্ভাশয়ের ক্যান্সারের বিভিন্ন ধাপঃ
স্টেজ ০ঃ এই ধাপে ক্যান্সার কোষগুলো গর্ভাশয়ের ইনট্রাপিথেলিয়াস এ বিদ্যমান থাকে। স্টেজ ০ এর সারভিক্যাল ক্যান্সার কে প্রাইমারি বা প্রাথমিক ক্যান্সারও বলা হয়।
স্টেজ ১ঃ এই পর্যায়ে ক্যান্সার কোষগুলো গর্ভাশয়ে বিন্যস্ত হতে শুরু করে।
স্টেজ২ঃ এই ধাপে ক্যান্সার কোষ গুলো যোনি পথে অথবা গর্ভাশয় সংলগ্ন কোষ গুলোতে সামান্য ছড়িয়ে পড়ে কিন্তু পেলভিক এ তখনও ছড়ায় না।
স্টেজ ৩ঃ এই ধাপে ক্যান্সার কোষগুলো যোনি পথের ১/৩ অংশে ছড়িয়ে পড়ে অথবা পেলভিক এ ও প্রবেশ করে এবং ইউটেরাস এ বাধা সৃষ্টি হওয়ার কারণে দুই পাশের কিডনিতে প্রসাব এসে জমা হয়।
স্টেজ ৪: এই পর্যায়ে ক্যান্সার কোষগুলো প্রজনন অঙ্গ থেকে অন্যান্য অংশে যেমন বৃহদান্ত্র, পিত্তথলি ইত্যাদিতে ছড়িয়ে পড়ে।
গর্ভাশয় ক্যান্সারের চিকিৎসা গুলো কি কি?
১. টোটাল হিসটেরেকটোমিঃ এই পদ্ধতিতে গর্ভাশয় এবং জরায়ুকে কেটে ফেলে দেওয়া হয়।
২. রেডিক্যাল হিসটেরেকটোমিঃ এই পদ্ধতিতে গর্ভাশয়, জরায়ু, যোনি পথের উপরিভাগ, ডিম্বাশয় এবং আক্রান্ত লসিকা গ্রন্থি কেটে ফেলা হয়।
২. রেডিও থেরাপিঃ রেডিও থেরাপির মধ্যে রয়েছে এক্সটারনাল রেডিয়েশন এক্সপোজার এবং ইনট্রা- ক্যাভিটারি ইর্যা ডিয়েশন রেডিও থেরাপি। এগুলো বিভিন্ন পর্যায়ের গর্ভাশয় ক্যান্সারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কিন্তু এর ফলে প্রতিবার মেনোপজের পূর্বে ব্যথা অনুভূত হয়।
৩. কেমোথেরাপিঃ গর্ভাশয়ের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে শেষ পর্যায়ের ক্যান্সার এবং পুনরায় ফিরে আসা ক্যান্সারের ক্ষেত্রেই কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। কিন্তু এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অত্যন্ত বেশী হওয়াতে সব রোগীরা এটি গ্রহন করতে পারেন না।
অপারেশনের পর রোগীর পরিচর্যাঃ
১. মানসিক পরিচর্যাঃ সাধারণত ক্যান্সারের রোগীরা অনেক ভয় এবং দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকেন। সুতরাং তাদের মনে অনুপ্রেরনা ও সাহস যোগাতে পরিবারের সবাইকে তার পাশে থাকতে হবে।
২. পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাঃ দিনে দুই বার যোনি মুখ পরিস্কার করে এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে যাতে কোনরুপ সংক্রমণ না হয়।
৩. ব্যায়ামঃ পেটের শ্বাসক্রিয়ার ব্যায়াম এবং মলদ্বারের পেশীর ব্যায়ামের মাধ্যমে পিত্তথলির ব্যাথা সহজে সেরে ওঠে।
৪.ডায়েটঃ রোগীকে প্রচুর ভিটামিন ও আমিষযুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে।
গর্ভাশয়ের ক্যান্সারের সর্বোত্তম চিকিৎসা কি?
সার্জন, প্যাথলজিস্ট, রেডিয়েশন ক্যান্সার এক্সপার্ট, মিনিম্যালি ইনভ্যাসিভ থেরাপির অঙ্কলজিস্ট, অভিজ্ঞ নার্স এবং আন্তরিক নার্সিং ব্যবস্থা, অনুবাদক, কনসালটেশন এক্সপার্ট ইত্যাদির সমন্বয়ে গঠিত মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিম ক্যান্সার রোগীদের অবস্থা পর্যালোচনা করে সর্বোত্তম ট্রিটমেন্ট প্ল্যান প্রদানে সক্ষম। সুতরাং এই চিকিৎসা ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত ও কার্যকরী হয়।
গর্ভাশয়ের ক্যান্সার চিকিৎসায় ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন এর ভুমিকাঃ
বহু বছরের গবেষণায় দেখা গেছে টি.সি.এম. বা ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন মানুষের শরীরকে আরও বলবৎ করে এবং শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার মাধ্যমে ক্যান্সার চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।এছাড়া এটি এন্টি -ক্যান্সার হিসেবেও কাজ করে। ওয়েস্টার্ন মেডিসিন এর সাথে চাইনিজ মেডিসিন এর ব্যবহার ক্যান্সার চিকিৎসা কে আরও কার্যকর করে তোলে। এছাড়াও রেডিও থেরাপি এবং কেমোথেরাপির পর শরীরে জমে থাকে ক্ষতিকর পদার্থ দূরীকরণেও এটি সাহায্য করে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও বাড়িয়ে দেয় ফলে রোগীর জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।
আমরা কি ধরনের সেবা দিয়ে থাকিঃ
বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যেসব হসপিটাল এ মাল্টিপল ডিসিপ্লিন থাকে যেমন অঙ্কসার্জারি , অঙ্কলজি, প্যাথলজি, ইমেইজলজি ইত্যাদি সহ এনেস্থেশিয়ার ডাক্তার এবং অভিজ্ঞ নার্স থাকে তাদের চিকিৎসা ব্যাবস্থা অত্যন্ত উন্নত, সাশ্রয়ী, উপযুক্ত ও কার্যকর হয়।
মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংজৌ এর “ওয়ান স্টপ” মেডিকেল সিস্টেম এ রয়েছে একাধিক মেডিকেল বিভাগের সমন্বয় যা রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোন সময় এ রোগ নির্ণয়ের সুবিধা প্রদান করে। এর ফলে ডায়াগনোসিস বা রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীকে কোন ঝামেলায় পড়তে হয়না। সুতরাং একদিকে এটি যেমন উন্নত ও আন্তরিক সব ধরনের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে তেমনি অন্য দিকে এটি চিকিৎসার কার্যকারিতা ও মান নিশ্চিত করে। ডাক্তারদের সাথে রোগীরা যাতে সহজে যোগাযোগ করতে পারেন সেজন্য এখানে বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে যেমন অনলাইন কন্সালটেশন, ই-মেইল, টেলিফোন কনভারসেশন, ফেইস টু ফেইস বা সরাসরি কন্সালটেশন এর সুবিধা। একজন ক্যান্সার রোগীকে এই ধরনের সেবা বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে থাকে। এখানকার মেডিকেল টিম বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নার্স, পুষ্টিবিদ,অনুবাদক প্রভৃতির সমন্বয়ে গঠিত যাতে যে কোন দেশের যে কোন পর্যায়ের রোগীকে আন্তরিক সেবা দেয়া সম্ভব হয়। চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে ডাক্তার এবং হসপিটাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনরূপ বাধা না থাকায় রোগীরা আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।
scrollTop