মস্তিস্কের ক্যান্সার
ব্রেইন ক্যান্সার কি?
করোটি গহ্বর এ অস্বাভাবিক কোষ বিভাজন থেকে ব্রেইন ক্যান্সার হয়। একে ইনট্রাকার্ণিয়াল টিউমারও বলা হয়। মস্তিস্কের বিভিন্ন কোষে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার, করোটিড নার্ভ, খুলি, পিটুইটারি গ্ল্যান্ড এবং অন্যান্য মেটাস্টাসিস ব্রেইন টিউমার থেকে এই ক্যান্সার হয়ে থাকে।
করোটিড গহ্বরে হাড় থাকে বিধায় মস্তিষ্কের টিউমারের কারণে ইনট্রাকার্ণিয়াল প্রেসার অত্যন্ত বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে মাথা ব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, বমি, কোমা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। বয়স ভেদে টিউমারের অবস্থান, ধরণ ইত্যাদি ভিন্ন হতে পারে।
ব্রেইন টিউমারে আক্রান্তের হার এবং মৃত্যুর হারঃ
সব ক্যান্সারের মধ্যে ব্রেইন ক্যান্সারে আক্রান্তের হার ৫% এবং শিশুদের ক্যান্সারের মধ্যে ৭০% ই হল ব্রেইন ক্যান্সার। যেকোনো বয়সেই এই ক্যান্সার হতে পারে তবে ২০-৪০ বছর বয়স এই ক্যান্সারের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। পুরুষ এবং মহিলা ভেদে এই ক্যান্সারের অনুপাত ১৩ঃ১০।
প্রতিবছর সারা বিশ্বে প্রায় ১৮,৫০০ জন মানুষ এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং মারা যান ১২,৭৬০ জন। ব্রেইন ক্যান্সারে গড় মৃত্যুর বয়স ৬৪ বছর। প্রতি বছর ব্রেইন ক্যান্সারে মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে।
ব্রেইন ক্যান্সারে কি ধরনের শারীরিক ক্ষতি হয়?
১. মস্তিষ্কের কোষ নষ্ট হয়ে যায়, স্নায়ুতান্ত্রিক বিভিন্ন অসুস্থতা দেখা দেয়। এর ফলে শরীরের স্বাভাবিক কার্যকলাপ ব্যহত হয়।
২. এডিমা অর্থাৎ টিস্যু গহ্বরে অতিরিক্ত পানি হওয়ার কারণে মাথা ফুলে যায়, করোটিতে অতিরিক্ত চাপ বেড়ে যায়।
৩.এডিমা এর কারণে করোটি গহ্বর অনেক বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ফলে সেন্ট্রাল নার্ভ সিস্টেম অকেজো হয়ে যেতে পারে।
৪. সব অঙ্গ প্রত্তঙ্গ গুলো ক্লান্ত হয়ে পড়ে, গতি কমে যায়, ঘ্রাণশক্তি ও নষ্ট হয়ে যায়।
ব্রেইন ক্যান্সারের কারণ কি?
১. রেডিয়েশন ঃ মোবাইল এবং কম্পিউটার হতে নির্গত তেজস্ক্রিয় তরঙ্গ অথবা যে কোন ভাবেই তেজস্ক্রিয় তরঙ্গের সংস্পর্শে আসলে ব্রেইন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
২. আঘাতঃ বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ ভাবে মাথায় অতিরিক্ত আঘাত পেলে অনেক ক্ষেত্রে ক্যান্সার কোষ সক্রিয় হয়ে যেতে পারে অথবা পূর্বে বিদ্যমান টিউমারের আকৃতিও বৃদ্ধি পেতে পারে।
৩. বিভিন্ন কেমিক্যালঃ দীর্ঘসময় ধরে বিভিন্ন কেমিক্যাল অথবা হেয়ার কালার মাথায় ব্যবহার করলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
৪.জন্মগত কারণঃ ভ্রূণের উন্নয়নের সময় একটোপিক প্রিমিটিভ সেল বা করোটি গহ্বর থেকে যায় এবং এর বর্ধন প্রক্রিয়ার বিভিন্নতার কারণে জন্মগত ভাবেও মস্তিষ্কের ক্যান্সার হতে পারে।
৫. বংশগত কারণঃ অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় পরিবারের কারো ব্রেইন ক্যান্সার ছিল এবং ভবিষ্যতে তারও হয়েছে। সুতরাং জেনেটিক্যাল কারনেও ব্রেইন ক্যান্সার হতে পারে।
ব্রেইন ক্যান্সারের লক্ষণ কি ?
১. প্রচণ্ড মাথা ব্যথায় ভোর রাতে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া এবং ঘুম যত গভীর হয় মাথা ব্যথাও ততো বাড়ে।
২. পেটে ব্যথা ছাড়া বা বমনেচ্ছা ছাড়াই বমি হতে পারে এবং খাবারের সাথে বমির কোন সম্পর্ক থাকে না। মাথা ব্যথা থাকাকালীন সময়েও বমি হতে পারে।
৩. ব্রেইন ক্যান্সারের ফলে মস্তিষ্কের অভ্যন্তরের চাপ অত্যন্ত বেড়ে যায় এবং শিরাস্থ রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্থ হয় ফলে স্ট্যাসিস এবং এডিমা হতে পারে।
৪. চোখ অতিরিক্ত কাঁপা বা চোখের পাতা বন্ধ করতে অসুবিধা হওয়া প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
৫. ব্রেইন ক্যান্সারের অন্যতম লক্ষণ হল ঘ্রাণশক্তি হ্রাস পাওয়া, অলীক কোন কিছুতে কল্পনা করা প্রভৃতি।
৬. ব্রেইন টিউমারের কারনে শ্রবণশক্তিও হ্রাস পায়।
৭. অপ্রাপ্ত বয়সে মৃগী রোগ দেখা দিলে এবং সাথে মানসিক ভারসাম্যহীনতা বা অন্য কোন অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে প্রথমেই বুঝতে হবে এটি ব্রেইন ক্যান্সার।
কিভাবে ব্রেইন ক্যান্সার নির্ণয় করা হয় ঃ
স্কাল এক্স-রে ঃ এর মাধ্যমে মস্তিষ্কের অভ্যন্তরের চাপ বেড়ে গেছে কিনা অথবা মাথার স্কাল বা খুলিতে কোন আঘাত আছে কিনা তা বোঝা যায়।
২. ব্রেইন সি.টি. স্ক্যানঃ এর মাধ্যমে ক্ষত স্থানের অবস্থান, আকার, আকৃতি, সংখ্যা ইত্যাদি বোঝা যায়।
৩. এম.আর.আই ঃএই পরীক্ষার মাধ্যমে আরও সূক্ষ্মভাবে টিউমারের আকার,আকৃতি,সংখ্যা প্রভৃতি বোঝা যায়।
৪. ই.ই.জি. এক্সামিনেশনঃ এর মাধ্যমে মস্তিষ্কের ভেতরে কোন টিউমারটি দ্রুত বর্ধনশীল তা জানা যায়।
৫. বায়কেমিক্যাল ডিটারমিনেশনঃ যাদের শ্লেষ্মা জনিত টিউমার তাদের ক্ষেত্রে রক্তের বায়কেমিক্যাল এক্সামিনেশন করা যেতে পারে।
রোগীর কি কি যত্ন নিতে হবে?
১. বেশী করে তাজা শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে।
২. প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন ডিম, মাছ ইত্যাদি খেতে হবে।
৩. অতিরিক্ত পশুর চর্বি এবং কোলেস্টোরল বিশিষ্ট খাবার পরিহার করতে হবে।
৪. কড়া চা, কফি, মদ ইত্যাদি পরিহার করতে হবে।
মানসিক পরিচর্যা ঃ
১. নিয়মিত পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
২. ব্রেইন ক্যান্সারের রোগীরা বিভিন্ন রকম নেগেটিভ চিন্তা ভাবনা করে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়তে পারেন সেজন্য তার প্রতি পরিবারের সদস্যদের বিশেষ যত্নবান হতে হবে।
৩. রোগীর পাশে থেকে তাকে সবসময় ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়তে সাহস ও অনুপ্রেরনা যোগাতে হবে।
ব্রেইন ক্যান্সারের সর্বোত্তম চিকিৎসাঃ
বিশেষজ্ঞ সার্জন, রেডিয়েশন ক্যান্সার এক্সপার্ট, মিনিম্যালি ইনভ্যাসিভ এক্সপার্ট অঙ্কলজিস্ট, অভিজ্ঞ নার্স, দোভাষী প্রভৃতির সমন্বয়ে গঠিত মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিম ক্যান্সার নির্ণয় থেকে শুরু করে পরামর্শ এবং পরবর্তী চিকিৎসা পরিকল্পনা প্রণয়নে অত্যন্ত সহায়ক হয় এবং এক্ষেত্রে অত্যন্ত উন্নত ও কার্যকর চিকিৎসা পাওয়া যায়।
ব্রেইন ক্যান্সার চিকিৎসায় ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিনের ব্যবহার ঃ
বহু বছরের গবেষণায় দেখা গেছে টি.সি.এম. বা ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন মানুষের শরীরকে আরও বলবৎ করে এবং শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার মাধ্যমে ক্যান্সার চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।এছাড়াও এটি অ্যান্টি-ক্যান্সার হিসেবেও কাজ করে। ওয়েস্টার্ন মেডিসিন এর সাথে চাইনিজ মেডিসিন এর ব্যবহার চিকিৎসা কে আরও কার্যকর করে তোলে। এছাড়াও রেডিও থেরাপি এবং কেমোথেরাপির পর শরীরে জমে থাকে ক্ষতিকর পদার্থ দূরীকরণেও এটি সাহায্য করে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও বারিয়ে দেয় ফলে রোগীর জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।
আমরা কি ধরনের সেবা দিয়ে থাকিঃ
বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যেসব হসপিটাল এ মাল্টিপল ডিসিপ্লিন থাকে যেমন অঙ্কসার্জারি , অঙ্কলজি, প্যাথলজি, ইমেইজলজি ইত্যাদি সহ এনেস্থেশিয়ার ডাক্তার এবং অভিজ্ঞ নার্স থাকে তাদের চিকিৎসা ব্যাবস্থা অত্যন্ত উন্নত, সাশ্রয়ী, উপযুক্ত ও কার্যকর হয়।
মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংজৌ এর “ওয়ান স্টপ” মেডিকেল সিস্টেম এ রয়েছে একাধিক মেডিকেল বিভাগের সমন্বয় যা রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোন সময় এ রোগ নির্ণয়ের সুবিধা প্রদান করে। এর ফলে ডায়াগনোসিস বা রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীকে কোন ঝামেলায় পড়তে হয়না। সুতরাং একদিকে এটি যেমন উন্নত ও আন্তরিক সব ধরনের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে তেমনি অন্য দিকে এটি চিকিৎসার কার্যকারিতা ও মান নিশ্চিত করে। ডাক্তারদের সাথে রোগীরা যাতে সহজে যোগাযোগ করতে পারেন সেজন্য এখানে বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে যেমন অনলাইন কন্সালটেশন, ই-মেইল, টেলিফোন কনভারসেশন, ফেইস টু ফেইস বা সরাসরি কন্সালটেশন এর সুবিধা। একজন ক্যান্সার রোগীকে এই ধরনের সেবা বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে থাকে। এখানকার মেডিকেল টিম বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নার্স, পুষ্টিবিদ,অনুবাদক প্রভৃতির সমন্বয়ে গঠিত যাতে যে কোন দেশের যে কোন পর্যায়ের রোগীকে আন্তরিক সেবা দেয়া সম্ভব হয়। চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে ডাক্তার এবং হসপিটাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনরূপ বাধা না থাকায় রোগীরা আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।
scrollTop