হাড়ের ক্যান্সার
বোন ক্যান্সার কি?
বোন ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের জেনেটিক নাম হল বোন ক্যান্সার। সবচেয়ে কমন বোন ক্যান্সার গুলোর মধ্যে রয়েছে- অষ্টেওসারকোমা, ক্যানড্রসারকোমা, ফাইব্রসারকোমা ইত্যাদি। সাধারণত বোন সেল, হাড়ের হেমাটোপয়েটিক উপাদান, তরুণাস্থি অথবা হাড়ের ডেসময়েড বা সাইনোভাল উপাদান থেকে এর উৎপত্তি হতে পারে।
বোন ক্যান্সার প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি এই দুই ভাগে বিভক্ত। সেকেন্ডারি বোন ক্যান্সার সাধারণত শ্রোণী, কশেরু, ফিমার ইত্যাদিতে বেশী হয়। প্রাইমারি বোন ক্যান্সার খুবই বিরল। বেশীরভাগ বোন ক্যান্সারই অন্যান্য ক্যান্সার যেমন ব্রেস্ট ক্যান্সার, থাইরয়েড ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার ইত্যাদির পরিণাম হিসেবে হয় এবং তখন একে বোন মেটাস্টাটিক ক্যান্সার বলা হয়।
বোন ক্যান্সারের হারঃ
সকল ক্যান্সারের মধ্যে বোন ক্যান্সার হওয়ার হার ০.২%। সারা বিশ্বে প্রতিবছর ২৮৯০ জন মানুষ বোন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং ১৪১০ জন মানুষ মারা জান। বোন ক্যান্সারের মধ্যে প্রায় ৩০% ই হল অষ্টেওসারকোমা এবং এটিই সবচেয়ে বেশী দেখা যায়। কিশোর বয়স অর্থাৎ ১০-২০ বছর বয়স এই ক্যান্সারের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এবং পুরুষ ও মহিলা ভেদে এর অনুপাত হল ২ঃ১।
বোন ক্যান্সার কেন হয়?
বোন ক্যান্সারের কারণগুলো এখনও স্পষ্ট নয় তবে মনে করা হয় পূর্বের কোন আঘাত বা ক্রনিক ইনফেকশনের কারনে এটি হতে পারে। এছাড়াও অন্যান্য সম্ভাব্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে হাড়ের অতিবৃদ্ধি, ক্রনিক প্রদাহজনিত জ্বালা পোড়া, বংশগত কারন, বিভিন্ন ভাইরাস, রক্তের সমস্যা, রেডিয়েশন এক্সপোজার ইত্যাদি।
বোন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো কি?
১) হাড়ের প্যাথলোজিকাল ডিসফিগারেশন।
২) অবিরাম পিঠ ব্যথা।
৩)সুস্পষ্ট কারন ছাড়া শরীরে এক বা একাধিক ফ্রাকচার দেখা দেওয়া।
৪) টিউমারের আশপাশের প্রত্যঙ্গগুলো অবশ বা অসাড় বলে মনে হতে পারে।
৫) হাড়ের উপরিভাগে মাংশের শক্ত পিণ্ড দেখা যেতে পারে। এর ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যথা হতেও পারে আবার নাও পারে।
৬) জ্বর, ওজন হ্রাস, ক্লান্তি দেখা দেয় এবং শরীরের গতি মন্থর হয়ে পড়ে।
৭) হাড়ের জয়েন্ট এ ব্যথা হতে পারে এবং অনেক্ষেত্রে সবসময় হাল্কা হাল্কা ব্যথা থাকতে পারে।
বোন ক্যান্সার নির্ণয়ের পরীক্ষা সমুহঃ
১) বোন স্ক্যান এর মাধ্যমে ছবি দেখে হাড়ের ক্ষত স্থান চিহ্নিত করা যায়।
২) এক্স রে, এম.আর.আই. , সি.টি. স্ক্যান ইত্যাদির মাধ্যমেও ক্ষতস্থান সনাক্ত করা যায়।
৩) হাড়ের টিউমার থেকে টিস্যু নিয়ে বায়প্সি করেও ক্যান্সার নির্ণয় করা হয়। বায়প্সি এর অন্তর্ভুক্ত হল-
ক) নীডল্ বায়প্সিঃ এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা পাতলা সূচ ব্যবহার করে টিউমার থেকে খুবই অল্প টিস্যু নিয়ে পরীক্ষা করেন।
খ) সার্জিক্যাল বায়প্সিঃ এক্ষেত্রে চামড়া কেটে সম্পূর্ণ টিউমার বা টিউমার থেকে সামান্য টিস্যু নিয়ে পরীক্ষা করা হয়।
বোন ক্যান্সারের কি কি চিকিৎসা আছে?
১) ইরেশনঃ এর মাধ্যমে টিউমার এর কিছু অংশ কেটে ফেলা হয়।
২) একটোমিঃ এটিও টিউমার রিমুভ করার একটি বিশেষ পদ্ধতি।
৩) এমুপুটেশন বা অঙ্গচ্ছেদঃ এটির মাধ্যমে হাড়ের যে অংশে টিউমার থাকে তা রিমুভ করে ফেলা হয়।
বোন ক্যান্সার রোগীর যত্নঃ
ডায়েটঃ
১) শরীরে পুষ্টির ঘাটতি পুরনের জন্য বিভিন্ন রকম পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
২) প্রচুর পরিমাণে তাজা শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে।
৩) ধূমপান,যত্নঃপান ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে।
মানসিক যত্নঃ
১) রোগীকে সব সময় উৎফুল্লতার মধ্যে রাখতে হবে।
২) বোন ক্যান্সারের রোগীকে এই ক্যান্সার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে হবে যাতে তিনি এই ক্যান্সারের সাথে লড়াই করতে পারেন।
৩) পরিবারের সদস্যদেরকে তার পাশে থেকে তার মনে অনুপ্রেরনা ও সাহস যোগাতে হবে।
বোন ক্যান্সারের সর্বোত্তম চিকিৎসা কি?
সার্জন, প্যাথলজিস্ট, রেডিয়েশন ক্যান্সার এক্সপার্ট, মিনিম্যালি ইনভ্যাসিভ থেরাপির অঙ্কলজিস্ট, অভিজ্ঞ নার্স এবং আন্তরিক নার্সিং ব্যবস্থা, অনুবাদক, কনসালটেশন এক্সপার্ট ইত্যাদির সমন্বয়ে গঠিত মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিম ক্যান্সার রোগীদের অবস্থা পর্যালোচনা করে সর্বোত্তম ট্রিটমেন্ট প্ল্যান প্রদানে সক্ষম। সুতরাং এই চিকিৎসা ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত ও কার্যকরী হয়।
বোন ক্যান্সার চিকিৎসায় ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন এর ভূমিকাঃ
বহু বছরের গবেষণায় দেখা গেছে টি.সি.এম. বা ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন মানুষের শরীরকে আরও বলবৎ করে এবং শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার মাধ্যমে ক্যান্সার চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।এছাড়াও এটি এন্টি -ক্যান্সার হিসেবেও কাজ করে। ওয়েস্টার্ন মেডিসিন এর সাথে চাইনিজ মেডিসিন এর ব্যবহার চিকিৎসা কে আরও কার্যকর করে তোলে। এছাড়াও রেডিও থেরাপি এবং কেমোথেরাপির পর শরীরে জমে থাকে ক্ষতিকর পদার্থ দূরীকরণেও এটি সাহায্য করে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও দেয় ফলে রোগীর জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।
আমরা কি ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকি?
বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যেসব হসপিটাল এ মাল্টিপল ডিসিপ্লিন থাকে যেমন অঙ্কসার্জারি , অঙ্কলজি, প্যাথলজি, ইমেইজলজি ইত্যাদি সহ এনেস্থেশিয়ার ডাক্তার এবং অভিজ্ঞ নার্স থাকে তাদের চিকিৎসা ব্যাবস্থা অত্যন্ত উন্নত, সাশ্রয়ী, উপযুক্ত ও কার্যকর হয়।
মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংজৌ এর “ওয়ান স্টপ” মেডিকেল সিস্টেম এ রয়েছে একাধিক মেডিকেল বিভাগের সমন্বয় যা রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোন সময় এ রোগ নির্ণয়ের সুবিধা প্রদান করে। এর ফলে ডায়াগনোসিস বা রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীকে কোন ঝামেলায় পড়তে হয়না। সুতরাং একদিকে এটি যেমন উন্নত ও আন্তরিক সব ধরনের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে তেমনি অন্য দিকে এটি চিকিৎসার কার্যকারিতা ও মান নিশ্চিত করে। ডাক্তারদের সাথে রোগীরা যাতে সহজে যোগাযোগ করতে পারেন সেজন্য এখানে বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে যেমন অনলাইন কন্সালটেশন, ই-মেইল, টেলিফোন কনভারসেশন, ফেইস টু ফেইস বা সরাসরি কন্সালটেশন এর সুবিধা। একজন ক্যান্সার রোগীকে এই ধরনের সেবা বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে থাকে। এখানকার মেডিকেল টিম বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নার্স, পুষ্টিবিদ,অনুবাদক প্রভৃতির সমন্বয়ে গঠিত যাতে যে কোন দেশের যে কোন পর্যায়ের রোগীকে আন্তরিক সেবা দেয়া সম্ভব হয়। চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে ডাক্তার এবং হসপিটাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনরূপ বাধা না থাকায় রোগীরা আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।
scrollTop