অ্যাড্রেনাল ক্যান্সার
অ্যাড্রেনাল ক্যান্সার কি?
অ্যাড্রেনাল ক্যান্সার ক্যান্সার এক ধরনের ম্যালিগ্ন্যান্সি যা অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ড এ শুরু হয় যা ধাপে ধাপে বিভিন্ন সাইজের টিউমার বা ক্যান্সারে রূপান্তর হয়। অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ড শরীরের অন্যতম এন্ডোক্রিন অর্গান যা কিডনীর পাশেই অবস্থান করে। এটি ছোট হলেও এখানে নানা আকারের টিউমার গঠিত হয়। সর্বনিন্ম ১- ৩ সেঃ মিঃ সাইজের টিউমার হয় এবং বড় টিউমার হলে তা ১০-৩০ সেঃমিঃ আকারেরও হতে পারে। এসব টিউমার দেখতে সীমের মত,আপেল আকারের,বরই আকারের বা তরমুজ আকারেরও হতে পারে। দীর্ঘদিন কোন চিকিৎসা না নিলে এটি বছরের পর বছর বড় হতে থাকে এবং শেষ স্তরে পৌঁছে গেলে রোগীর চিকিৎসা গ্রহনে অনেক বড় সমস্যা দেখা দেয়।
অ্যাড্রেনাল ক্যান্সারের রকমভেদঃ
এই ক্যান্সারের ম্যালিগ্ন্যান্সি সাধারনত কোরটেক্স এ গঠন হয় এবং চক্ষুগোচর হয়না। এটি শুধু সাধারন টিস্যুই ধ্বংস করেনা বরং কিডনী পাশে থাকায় তার মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।
অ্যাড্রেনাল মডুলা থেকে এডেনোমা টিউমার হয় যা গ্যাংগলিয়ন বা ক্রোমাফিন টিস্যু ধ্বংস করে, নিউরোব্লাস্টোমা,প্যারাগ্যাংগ্লিয়োমা বা ফেক্রোমোসাইটোমা থেকে এসব টিস্যু আলাদা হয়।
অ্যাড্রেনাল ক্যান্সারের কারনঃ
এখন পর্যন্ত এ ক্যান্সারের সঠিক কোন কারণ বের করা যায়নি কিন্তু নিন্মোক্ত ঝুঁকি গুলো রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়ঃ
১। ধনুষ্টঙ্কার , ক্রোনিক হাইপোআড্রেনিয়া এর কারনেও হতে পারে।
২। ইমোনোলজিক ডি আরাঞ্জমেন্ট, অ্যাড্রেনাল কোরটেক্স এর অ্যাট্রোফি এই ক্যান্সারের সাধারন কিছু কারণ।
৩। অন্য কোন ম্যালিগ্ন্যান্সি থেকে মেটাস্টাসিস দেখা দিলে ২৬-৫০ ভাগ হারে তা অ্যাড্রেনাল ক্যান্সারের রূপ নেয়। যেমন গ্যাস্ট্রইন্টেসটিনাল ,ফুস্ফুস,ব্রেস্ট,থাইরয়েড ক্যান্সার থেকেও এটা ছড়াতে পারে।
অ্যাড্রেনাল ক্যান্সারের ক্লিনিক্যাল উপসর্গঃ
অ্যাড্রেনাল কোরটেক্স বা মেডুলা থেকে এই টিউমারের গঠন হয়। এন্ডোক্রিন ফাংশনের আক্রান্ত হবার কারনেই এর উৎপত্তি ঘটে।
হাইপারকর্টিসলিজম অ্যাড্রেনাল কর্টিক্যাল হাইপারপ্লাসিয়া বা অ্যাড্রেনাল টিউমার থেকে এ রোগের উপসর্গ বৃদ্ধি পেতে থাকে। মোষ কুজ, চেহারার পরিবর্তন, অসারতা,অবসাদ, ব্যথা,উচ্চ রক্তচাপ, টাক,ব্রন, যৌন সমস্যা, বাধকতা এর অন্যতম কারণ। ফেওক্রোমোসাইটোমা এর প্রধান উপসর্গ হল হাইপারটেনশন, মেটাবোলিজম এর পরিবর্তন,মাথা ব্যথা, অতিরিক্ত ঘাম, ভয় পাওয়া , শীতলতা এসবও এর অন্যতম উপসর্গ।
অ্যাড্রেনাল ক্যান্সার ডায়াগনোসিসঃ
১। রক্ত এবং মূত্র পরীক্ষা।
২। সি টি স্ক্যান
৩। এম আর আই এর মাধ্যমে পরীক্ষণ।
৪। আল্ট্রাসাউণ্ড বি এর মাধ্যমে অ্যাড্রেনাল এর রোগ পরীক্ষণ।
অ্যাড্রেনাল ক্যান্সারের নার্সিং মেথডঃ
১। অ্যাড্রেনাল ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের অবশ্যই সচেতন এবং রোগ সেরে ওঠা সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব রাখতে হবে।
২। রোগীর উচিৎ স্বাভাবিক থাকা এবং প্রয়োজনমত বিশ্রাম নেয়া। যেকোন ধরনের শারীরিক শ্রম থেকে বিরত থাকতে হবে যাতে অ্যাবডোমেন আঘাতপ্রাপ্ত না হয়। প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর আলট্রাসাউন্ড বি এর পরীক্ষণ করা বাঞ্ছনীয়।
৩। যেকোন ধরনের লবনাক্ত খাবার বা ঝাল জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।কোন পচা খাবার বা রোস্ট করা খাবার খাওয়া যাবেনা । স্বাভাবিক মল বা মূত্রত্যাগ বজায় রাখতে ফাইবার যুক্ত খাবার খেতে হবে। মটরশুঁটি বা চর্বিযুক্ত খাবার যথাসম্ভব পরিহার করাই শ্রেয়।
৪। যে কোন সংক্রমণ প্রতিরোধে ইতিবাচক থাকতে হবে।
৫। রেনাল সংক্রান্ত সমস্যা এড়ানোর জন্য, রোগীর রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত।
উপরোক্ত বিষয়গুলো প্রতিদিনের নার্সিংয়ের সময় খেয়াল রাখতে হবে এতে করে রোগীর অবস্থার দ্রুত উন্নতি সম্ভব।
অ্যাড্রেনাল ক্যান্সারের চিকিতসাঃ
(১) অ্যাড্রেনাল টিউমারের প্যাথলজিক্যাল পরিবর্তন নির্ধারন করার মাধ্যমে সার্জারী করে টিউমার নির্মূল করা সম্ভব। কিন্তু টিউমারের সাইজ বড় হলে বা টিউমারের পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে এবং মেটাস্টাসিস থাকলে সার্জারী করা বিপদজনক হতে পারে।
(২) মিনিম্যালি ইনভেসিভ থেরাপির দ্বারা উপরোক্ত সমস্যার ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব। যেসব টিউমার সার্জারীর মাধ্যমে নির্মূল করা সম্ভব হয়না তা মিনিম্যালি ইনভেসিভ থেরাপির মাধ্যমে সম্ভব।
এ সকল থেরাপি নিন্মে বর্নিত হলঃ
১। সি টি গাইড এবং আলট্রাসাউন্ড এর মাধ্যমে ক্রাইওথেরাপি ব্যবহার করে টিউমার সেল ধ্বংস করা যায়। এ ক্ষেত্রে টিউমারের ভেতর সুচ ঢুকিয়ে দেয়া হয় এবং আক্রান্ত স্থানের টিস্যুগুলো ধ্বংস করা হয় এবং স্বাভাবিক টিস্যুগুলো যাতে আক্রান্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হয়।
২। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহারের মাধ্যমে টিউমারের ভেতরে বৈদ্যুতিক শকের মাধ্যমে তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে ক্যান্সারে আক্রান্ত টিস্যু ধ্বংস করা হয়।
৩। রেডিও একটিভ পার্টিকেল ইমপ্ল্যান্টেশন ব্যবহার করে আয়োডিন ১২৫ নামক মেডিসিন টিউমারের ভেতর প্রবেশ করিয়ে টিউমার সেল ধ্বংস করেও এ ক্যান্সারের চিকিৎসা করা হয়। এটি একধরনের অভ্যন্তরীণ রেডিও থেরাপি।
(৩) ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন (টি সি এম)
মৌখিক বা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ট্রেডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন গ্রহনের ফলে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা সম্ভব। ইং এবং ইয়াং এর সামঞ্জস্যতা বজায় রেখে টিউমার প্রতিরোধ শক্তি বাড়িয়ে ক্যান্সার কোষ নির্মূলে উপযুক্ত প্রভাব ফেলা যায়।
মিনিম্যালি ইনভেসিভ পদ্ধতিতে ক্যান্সার চিকিৎসায় মডার্ন ক্যান্সার হসপিটালে ক্রাইওথেরাপি,রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাব্লেশন, ইন্টারভেনশনাল এম্বোলিজম,পার্টিকেল ইমপ্ল্যান্টেশন,ইম্যুনু থেরাপি ইত্যাদি চিকিৎসা করা হয় যা সারা বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। যে কোন পর্যায়ের ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা থেকে শুরু করে সেরে ওঠা পর্যন্ত খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয় এবং সাবধানতা অবলম্বন করা হয়। রোগীর দেহে কোন ক্ষত বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই টিউমার ধ্বংস করা সহ যেকোন ক্যান্সারের চিকিৎসা সম্ভব।
scrollTop