লিউকেমিয়ার লক্ষণ
লিউকেমিয়ার লক্ষণগুলো সম্পর্কে আগে থেকে জানা থাকলে রোগীরা সতর্ক থাকতে পারেন এবং কোন লক্ষণ দেখা মাত্রই দ্রুত চিকিৎসা গ্রহন করতে পারেন।
প্রাথমিক অবস্থায় লিউকেমিয়ার লক্ষণ গুলো তেমন স্পষ্ট হয় না বিধায় অনেক রোগীই চিকিৎসা নিতে দেরি করে ফেলেন। লিউকেমিয়া দুই ধরনের আছে এবং ধরণ ভেদে এর লক্ষণ ও আলাদা হয়। এই লক্ষণগুলো নিচে বিস্তারিত বর্ণনা করা হল-
ক্রনিক লিউকেমিয়ার লক্ষনঃ
১. এক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় বাহ্যিকভাবে কোন স্পষ্ট লক্ষণ দেখা যায় না। অন্য কোন রোগের পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত ব্লাড রিপোর্টে চিকিৎসকরা রক্তে অস্বাভাবিক পরিবর্তন বা প্লীহা বড় হয়ে গিয়েছে কিনা তা লক্ষ্য করে লিউকেমিয়া সনাক্ত করেন। অর্থাৎ অন্য রোগ সনাক্ত করনের সময় লিউকেমিয়া ধরা পড়ে।
২. কোন লক্ষণ দেখা গেলেও তা তেমন তীব্র হয় না কিন্তু সময়ের সাথে লক্ষণগুলো তীব্রতর হতে থাকে। ক্রনিক লিউকেমিয়ার সাধারন লক্ষণগুলো হল- ক্লান্তিভাব, হালকা জ্বর, অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া বিশেষ করে রাতের বেলায়, কারন ছাড়াই ওজন হ্রাস, প্লীহা বড় হয়ে যাওয়ার কারণে খাওার পরপর পেটের উপরিভাগ ফুলে যাওয়া।
৩. ক্রনিক লিউকেমিয়ার ক্ষেত্রে রোগীর গায়ের রঙ বিবর্ণ হয়ে যায়, ঠোট ফ্যাকাশে হয়ে যায়, এর খুব সাধারন একটি লক্ষণ হল প্লীহা বড় হয়ে যায় এবং নাভি সমতল হয়ে যায়, বুকের নিম্নাংশ স্পর্শকাতর হয়ে যায়, ক্যান্সার পরিণত পর্যায়ে চলে গেলে চামড়ার নিচে ছোট ছোট লাল তিলের মত দেখা যায়, চোখের চারপাশ ও মাথার তালু ফুলে যায় কিন্তু কোন ব্যথা থাকেনা।
অ্যাকিউট লিউকেমিয়ার লক্ষনঃ
১.অ্যানিমিয়াঃ অস্থিমজ্জায় অস্বাভাবিক পরিবরতনের ফলে লোহিত রক্ত কণিকাএবং হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ কমে যাওয়ায় রক্ত শূন্যতা দেখা যায় এবং অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে এই রক্তশূন্যতা প্রকট আকার ধারন করে।
২. জ্বরঃ লিউকেমিয়ার কারণে জ্বর হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন রকম ইনফেকশন দেখা দেয়।
৩. রক্তপাতঃ নাক ও দাতের মাড়ি এবং শরীরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ থেকে রক্ত ক্ষরণ হয়। অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের কারণে কোমা হতে পারে এমনকি রোগী মৃত্যুবরণও করতে পারেন।
৪. হজমে অসুবিধাঃ কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপির প্রতিক্রিয়া হিসেবে হজমে অসুবিধা হতে পারে।
৫. হাইপারইউরিসেমিয়াঃ কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপির প্রতিক্রিয়া হিসেবে এটি হয়ে থাকে। এছাড়াও অলিগুরিয়া এবং অ্যানুরিয়া অর্থাৎ প্রসাব কম হতে পারে বা বন্ধ হয়ে যেতে পারে ফলে কিডনি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে।
শিশুদের ক্ষেত্রে যেসব লক্ষণ দেখা যায়ঃ
শরীরের রঙ ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, ক্লান্তি ভাব, ক্ষুধামান্দ্য ও খাবারে অরুচি,নাক বা মাড়ি দিয়ে রক্তক্ষরণ, কারো কারো ক্ষেত্রে জ্বর এর সাথে শরীর ব্যথা এবং বাত জ্বর বা রিমোটিক ফিভার হয়ে থাকে।
১. অ্যানিমিয়াঃ শুরুর দিক থেকেই অ্যানিমিয়া দেখা যায় এবং ধীরে ধীরে তা প্রকট হতে থাকে। অ্যানিমিয়া বা রক্ত শূন্যতার লক্ষণ হল রঙ ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, দুর্বলতা, ঘনঘন শ্বাস নেওয়া এবং হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া।
২.জ্বরঃ অনিয়মিত ভাবে জ্বর আসা, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা। এই জ্বরের তাপমাত্রা কম থাকে এবং অ্যান্টিবায়োটিক ও কোন কাজ করে না। তবে সেকেন্ডারি ইনফেকশন (শ্বাসনালী,মুত্রনালী ইত্যাদির ইনফেকশন) হলে জ্বরের তাপমাত্রা অনেক বেশী হয়।
৩.রক্তপাতঃ রক্তপাতের প্রধান কারন হল শ্বেত কনিকা বেড়ে যাওয়ার কারণে অস্থিমজ্জার যে সেলটি রক্তের অনুচক্রিকা সৃষ্টি করে তা বাধার সম্মুখীন হয়। দ্বিতীয়ত, লিভারের অক্ষমতার কারণে ফিব্রিনোজেন, থ্রম্বিনোজেন এবং আসেলেরিন পর্যাপ্ত পরিমানে উৎপন্ন হয় না। তৃতীয়ত, কৈশিকনালীর পরিব্যপ্তিতা বেড়ে যায়। বেশিরভাগ রক্তপাতই চামড়ার ভেতরে শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীতে হয় এর ফলে চামড়ায় ছোট ছোট লাল বা বেগুনী রঙের দাগ দেখা যায়, নাক ও মাড়ি দিয়ে রক্তপাত হয়,পাকস্থলী বা অন্ত্রে রক্তক্ষরণ হয়, প্রসাবের সাথে রক্ত যায়। অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এবং এর ফলে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
কোন ধরনের লক্ষণ দেখা মাত্রই দেরি না করে দ্রুত বিশেষায়িত কোন হসপিটালে যোগাযোগ করার জন্য মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংজৌ এর পক্ষ থেকে আপনাকে বিশেষ ভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে।
scrollTop