গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার নির্ণয় পদ্ধতি
গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার নির্ণয় পদ্ধতি গুলোর মধ্যে রয়েছে গ্যাস্ট্রোকপি, এক্স-রে, সি.টি, এন্ডওস্কপিক আলট্রা সাউন্ড এক্সামিনেশন ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে গ্যাস্ট্রোকপি সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ডাক্তারের মাধ্যমে গ্যাস্ট্রোকপি করা হলে রোগী কোনোরকম অসুবিধা বোধ করেন না সে কারনে এই পরীক্ষাটির জন্য অভিজ্ঞ ডাক্তার প্রয়োজন। প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে এই ক্যান্সার নির্ণয়ের বিভিন্ন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হলেও নিম্নোক্ত পদ্ধতি গুলো এই ক্যান্সার নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী কার্যকর।
১. এন্ডওস্কপি বা ফাইবারগ্যাস্ট্রোকপিঃ প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকর একটি পদ্ধতি। এর সাহায্যে বিনাইন ও ম্যালিগন্যান্ট টিউমার সনাক্ত করা যায় এবং ক্যান্সারের ধরণ ও নির্ণয় করা যায়। এছাড়াও ফলো-আপ এবং মনিটরিং এর সময় রোগীর অবস্থা সম্পর্কে জানার জন্যও এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয়।
২. এক্স-রেঃ ক্যান্সারের ভিন্ন ভিন্ন ধাপে এর ফলাফলও বিভিন্ন হয়। যেমন প্রাথমিক ধাপে এক্স-রে এর মাধ্যমে জানা যায় যে ক্যান্সার শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীতে ছড়িয়েছে কিনা। আবার পরবর্তী ধাপ গুলোতে এক্স-রে এর মাধ্যমে ক্যান্সারের ধরণ সম্পর্কে জানা যায়।
৩. এই পরীক্ষাটির সাহায্যে জানা যায় যে ক্যান্সার গ্যাস্ট্রিক প্রাচীর অতিক্রম করে বাইরে ছড়িয়ে পরেছে কিনা এবং কি হারে এটি বাড়ছে। এছাড়াও আশে পাশে মেটাস্টাসিস হয়েছে কিনা এবং অন্যান্য প্রত্যঙ্গে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছে কিনা তাও সি.টি. স্ক্যান এর মাধ্যমে জানা যায়।
৪.এন্ডওস্কপিক আলট্রাসাউন্ড এক্সামিনেশনঃ গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার সনাক্তকরনের জন্য এটি একটি নতুন প্রযুক্তি। এর মাধ্যমে পাকস্থলীর প্রতিটি প্রাচীর দেখা যায় এবং টিউমারের সামগ্রিক চিত্রটিও বোঝা যায়।এন্ডওস্কপিক আলট্রাসাউন্ড গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার এবং এর বিভিন্ন পর্যায় নির্ণয়ে সাহায্য করে।
গ্যাস্ট্রোকপি বেদনাদায়ক নয়ঃ অনেক রোগীই মনে করেন যে গ্যাস্ট্রোকপি বেদনাদায়ক একারণে তারা পরীক্ষাটি করাতে ভয় পান। বর্তমানে এই পরীক্ষা পদ্ধতিটি আরও বেশী উন্নত হয়েছে এবং রোগীর জন্যও এটি এখন অনেক বেশী সহনশীল। সাধারণত অভিজ্ঞ ডাক্তার এই পরীক্ষাটি মাত্র ৩-৫ মিনিটেই সম্পন্ন করতে পারেন এবং কোন অবস্থাতেই পরীক্ষাটির জন্য ১০ মিনিটের বেশী সময় দরকার হয় না। গ্যাস্ট্রোকপি বা এন্ডওস্কোপি বেদনাদায়ক নয় তবে পরীক্ষাটির সময় রোগী বমি বমি ভাব অনুভব করতে পারেন এবং শ্বাসপ্রশ্বাসে অসুবিধা হতে পারে। একারনেই অন্ননালীর মধ্যে এন্ডওস্কোপ প্রবেশ করানোর পর অনেক রোগীই ভয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ করে রাখেন এবং এজন্যই বমি বমি ভাব হয়ে থাকে। এই অসুবিধা এড়ানোর জন্য গ্যাস্ট্রোকপি চলাকালীন সময়ে শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে হবে।
ক্যাপসুল এন্ডওস্কপির মাধ্যমে সহজেই পাকস্থলী পরীক্ষা করা যায়ঃ মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংজৌ এর ক্যাপসুল এন্ডওস্কপির মাধ্যমে সহজেই পাকস্থলী পরীক্ষা করা যায়। এক্ষেত্রে পরীক্ষার জন্য রোগীকে একটি বিশেষ ধরনের ক্যাপসুল খেতে হয়। আধুনিক বিশ্বে এই প্রযুক্তিটি ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ক্যাপসুল এন্ডওস্কপি হল “ ইনটেলিজেন্ট ক্যাপসুল এন্ডওস্কপি সিস্টেম” এর সংক্ষিপ্ত নাম। এই পরীক্ষাটির জন্য রোগীকে এক ধরনের ক্যাপসুল খেতে হয় যা তার হজমতন্ত্র ও পাকস্থলীতে পরিভ্রমন করে ও অসংখ্য ছবি তোলে। পরীক্ষাটির জন্য রোগীকে ৮-১০ ঘণ্টা হসপিটালে থাকতে হয় এর পর তিনি হসপিটাল ত্যাগ করতে পারেন। শুধুমাত্র রেকর্ডারটি ডাক্তারের কাছে পাঠাতে হয় এবং প্রায় ৮০০০০ চিত্র দেখে ডাক্তার রোগ সনাক্ত করে থাকেন। ক্যাপসুলটি রোগীর মলের সাথে বের হয়ে যায়।
বর্তমানে ট্র্যাডিশনাল গ্যাস্ট্রোকপি এবং ব্যারিয়াম মিলের পরিবর্তে ক্যাপসুল এন্ডওস্কপি ব্যবহৃত হয়। একদিকে এই পরীক্ষাটি রোগীদের জন্য যেমন অত্যন্ত সহজ তেমনি অন্যদিকে এর মাধ্যমে অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ক্ষতও সনাক্ত করা যায় যা সাধারন এন্ডওস্কপি পারেনা। এমনকি অন্ত্রের কোন অসুখ থাকলে তাও আগে থেকে সনাক্ত করা যায়।
গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার সনাক্ত করার ক্ষেত্রে এর ডায়াগনোসিস পদ্ধতিগুলো সঠিক হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেননা এর উপরই সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থা নির্ভর করে।
scrollTop