রুয়ান ওয়েন্দুয়ো, ভিয়েতনামের হ্যানয়ের ৪ বছর বয়সী একজন শিশু, তার এখন নিস্পাপ এবং সতেজ শিশুকাল কাটানোর কথা। অথচ সে এখন এমন একটি ব্যাথা নিয়ে বড় হচ্ছে যা অন্য শিশুরা চিন্তাও করতে পারে না। তার ডান মুখমন্ডলে যে বড় টিউমারটি হয়েছে তা তার নাসারন্ধ্র এবং মুখকে চাপ দিচ্ছে। এটা তার শ্বাস-প্রশ্বাস ও খাওয়ায় অসুবিধা করতেছে। ছেলের মুখে ব্যাথার চিত্র দেখে ওয়েন্দুয়োর বাবা-মা তাদের মনে অনেক দুঃখ পেলেন। তখন থেকেই তাদের ছেলেকে বাঁচানো তাদের দৃঢ় বিশ্বাসে পরিণত হলো। তারা ভিয়েতনামে অনেক হাসপাতালে খোঁজ নিলেন, কিন্তু অবস্থা আরো খারাপ করে ফেললেন যখন তার রোগকে লিউকেমিয়া ভেবে ভুল চিকিৎসা করা হলো। যখন ওয়েন্দুয়োর জীবন অনেক বিপদগ্রস্ত, ঠিক সেই সময়ে তার সামনে বাঁচার দরজা খুলে গেলো। হ্যানয়ের কেন্দ্রীয় নাক-কান-গলা হাসপাতালের একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওয়েন্দুয়ো তার বাবা-মা কে সাথে করে চীনের ক্যান্সার গবেষণা ঘাঁটি - মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংঝু তে গেলেন।
মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংঝু এর ডাক্তার দাই ওয়েনিয়ান শিশুটির উপর নিবিড় পরীক্ষা চালানোর জন্য একটি বিশেশজ্ঞ টীম গঠন করেন। তারা শিশুটির ম্যাক্সিলোফেসিয়াল অঞ্চলের ডানপাশে র্যা বডোমায়োসারকোমা’র অস্তিত্ব টের পান। যেহেতু ওয়েন্দুয়ো এখনো শিশু, বিশেষজ্ঞরা এটাকে এম্ব্রায়োনিক র্যা বডোমায়োসারকোমা বলে অভিহিত করেন, যেটি তৃতীয় স্তরে পৌছে গেছে এবং শুধু অস্ত্রোপচার দ্বারা ঠিক করা সম্ভব নয়। তখন ডক্টর দাই ও তার টীম সিদ্ধান্ত নিল গ্রীণ কেমোথেরাপি করার। যেহেতু ওয়েন্দুয়ো ভিয়েতনামে ৯বার কেমোথেরাপির ভিতর দিয়ে গিয়েছিলো, তাই ডাক্তাররা এর প্রভাব সম্পর্কে সুস্পষ্ট ছিলেন না। মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংঝু এর গ্রীণ কেমোথেরাপি হল গতানুগতিক কেমোথেরাপির একটি উন্নত প্রক্রিয়া। এটা গতানুগতিক কেমোথেরাপির সীমাবদ্ধতাগুলোকে অতিক্রম করতে পারে এবং এর অনন্য সুবিধা রয়েছে যা হলো – চিকিৎসা পরবর্তী প্রভাব এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কমানো। অন্যদিকে, চিকিৎসক টীমটির ছিলো শিশু এবং বয়স্কদের মধ্যে পার্থক্য করতে পারার অনন্য অভিজ্ঞতা। যার ফলে তারা কেমোথেরাপিতে ব্যবহৃত ড্রাগস, তার মাত্রা এবং বিরতির সময় সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। একবার চিকিৎসার পর ওয়েন্দুয়ো অনেকখানি ভাল হয়ে গেলো। টিউমার কমতে শুরু করল, রোগী কথা বলতে এবং স্বাভাবিকভাবে খাওয়া শুরু করতে পারল। এটা দেখে ওয়েন্দুয়োর বাবা-মা চিকিৎসা পদ্ধতিকে অনেক ধন্যবাদ দিতে লাগল।
অন্যদিকে, তরুণ বাবা-মা দের জন্য ব্যয় বহন করা অনেক কঠিন ছিলো। আত্মীয় স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধব এর কাছ থেকে তারা মোট ২০,০০০ আরএমবি সংগ্রহ করতে পেরেছিলো এবং তারা দেখলো যে বাকী চিকিৎসার জন্য তারা আর কোনো অর্থ দিতে পারবে না। তারা ভিয়েতনামে কৃষিকাজ করে সংসার চালাত, যেখানে তাদের মাসিক আয় ছিলো মাত্র ১০০০ আরএমবি। ইতোমধ্যে তারা তাদের সব সঞ্চয় ওয়েন্দুয়োর চিকিৎসার পিছনে খরচ করে ফেলেছেন এবং এখন ঋণে আছেন। কোন উপায় না দেখে এই বৃদ্ধ বয়সেও ওয়েন্দুয়োর দাদা-দাদীকে কৃষিকাজে নামিতে হয়েছিল।
সবকিছু শুনে মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংঝু এর নেতারা তাদের ফ্যাকাল্টিদের কাছে মানবতার সেবার জন্য আহবান জানালেন এবং রুয়ান ওয়েন্দুয়ো এর জন্য অনুদান দিতে বললেন। ১৩ই জুলাই কমপক্ষে ৩০০ মেডিক্যাল সদস্য হাসপাতালের লবিতে প্রচারণা চালান এবং প্রায় ৫৬২০ আরএমবি এর মত সংগৃহীত হয়। আশ্চর্যের বিষয় এইটা যে এই হাসপাতালের অনেক রোগীর বাবা-মা ও সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। অন্যদিকে মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংঝু এই চিকিৎসার ব্যয়ভার কিছুটা কমিয়ে দেয়। মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংঝু সবসময়ই আর্ত ও মানবতার সেবায় তাদের অবদানের কথা মাথায় রেখেছেন যে এটা তাদের কর্তব্য।
অনুদানের অর্থ পেয়ে ওয়েন্দুয়ো এর মা কান্না ধরে রাখতে পারলেন না। তিনি মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংঝু এর সকল ফ্যাকাল্টিকে ধন্যবাদ জানান তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য। মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংঝু এর এই মহানুভবতা সকল বিদেশি রোগীদের মুগ্ধ করেছে।
রুয়ান ওয়েন্দুয়ো এবং তার মা’র সাথে মেডিক্যাল কর্মীবৃন্দ
মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংঝু এর নিকট ওয়েন্দুয়োর মা অনেক কৃতজ্ঞ
অনুদানের চিত্র
অনুদানকৃত খেলনা হাতে ওয়েন্দুয়ো