-১৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কি হয়?
এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাপা হয়েছে দক্ষিণ মেরুতে – ৮৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এইরকম কম তাপমাত্রায় লোহাও বরফের মত ভঙ্গুর হয়ে যায়। তাহলে -১৬৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কি হবে, যা কিনা ৮৯.৬ এর থেকে প্রায় ২গুণ কম? এইরকম কম তাপমাত্রায় টিউমারের মধ্যে বাতাস প্রবেশ করালে কি হবে?
২২শে সেপ্টেম্বর ২০১২ সকাল ১০টায় ক্রায়োথেরাপি নামে ক্যান্সারের একটি চিকিৎসা মডার্ণ ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংঝু এর ১০ম তলার অপারেশন রুমে অনুষ্ঠিত হয়। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি ভিডিও সম্প্রচারের মাধ্যমে একই তলার সেমিনার রুমে সরাসরি দেখানো হয়। বাংলাদেশের মিডিয়া প্রতিনিধিদল সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সরাসরি দেখেন যে কত কমভাবে ক্যান্সারের চিকিৎসা সম্ভব।
ক্রায়োথেরাপির যে চিকিৎসা চলছিল তাতে কাজ ছিলো -১৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রোগির ক্যান্সার কোষের মধ্যে বায়ু প্রবেশ করানো। এত কম তাপমাত্রায় টিউমারের কি হবে?
ভিডিওর মাধ্যমে দেখা গেলো যে ডাক্তাররা রোগীর আক্রান্ত কোষের অংশকে জীবাণুমুক্ত করে ফেললেন। সবাই পরবর্তী অংশ দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলেন। সবার স্নায়বিক অবস্থা বুঝতে পেরে ডঃ পেং সবার মাঝে ক্রায়োথেরাপি নিয়ে আলোচনা করতে লাগলেন। ক্রায়োথেরাপি হল টিউমারের একধরনের চিকিৎসা যা সম্পূর্ণভাবে দেখাশোনা, সঠিকভাবে স্থাপন এবং দ্রুত ঠান্ডাকরণের মাধ্যমে হয়ে থাকে। বারংবার খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঠান্ডা এবং সাধারণ তাপমাত্রা সৃষ্টি করে টিউমার কোষকে জমাট বাধানো হয় এবং পরবর্তীতে তা ধ্বংস করা হয়।
যাদুকর ক্রায়োথেরাপি অবলোকন করা
ভিডিওর মাধ্যমে আমরা দেখি যে, অজ্ঞান করার পর ডাক্তার সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে সুই সন্নিবেশ করার জন্য বিন্দু, কোণ এবং গভীরতার সেটিং ঠিক করতে ছিলেন। একটি সূক্ষ্ম এবং দীর্ঘ স্টেইনলেস স্টীল সুই-টিউব লক্ষ্য যায়গায় সেট করলেন এবং এটার সন্নিবেশন কোণ ঠিক করলেন কম্পিউটারে উপস্থিত তারিখের মাধ্যমে। এই সমস্ত ঠিক করার পর, ক্রায়োথেরাপির বুশিং ধীরে ধীরে সুই নল দিয়ে টিউমারের মধ্যে ঢোকানো হচ্ছিলো।
এরপর ডাক্তার ক্রায়োথেরাপি শুরু করলেন এবং ডঃ পেং ব্যাখ্যা করলেন যে আর্গন গ্যাস ১০ সেকেন্ডের মধ্যে তাপমাত্রা -১৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে নিয়ে আসবে। সাংবাদিকরা স্পষ্টভাবে দেখলেন যে বরফের বল তৈরি হতে শুরু করেছে এবং আর্গন গ্যাসের দ্রুত ঠাণ্ডা হওয়ার মাধ্যমে তা একটু পরে টিউমারকে ঢেকে দিল।
ছবি তোলা এবং ভিডিও করার সময় সাংবাদিকরা ডঃ পেং এর সাথে কথা বলছিলেন এবং তাদের একজন জিজ্ঞাসা করলেন, “ সাধারণত অপারেশন করার সময় রক্ত বের হয়, কিন্তু এখানে কেনো তা দেখলাম না?” ডঃ পেং বললেন যে ক্রায়োথেরাপি আসলে কোনো অপারেশন না, এটা আসলে ন্যূনতমরূপে আক্রমণকারী চিকিৎসা যা ছোট ট্রমা এবং অল্প রক্তপাতের সুবিধা কাজে লাগিয়ে করা হয়।
১৫-২০ মিনিট পর ডঃ পেং বললেন যে হিলিয়াম গ্যাস ইঞ্জেক্ট করলে তাপমাত্রা খুব তারাতারি ২০-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এ উঠে যাবে। তারপর আবার ঠাণ্ডা করা হবে। তার মানে, এই পদ্ধতিতে ২বার ঠাণ্ডা ও ১বার গরম করা হয়।
পুরো সময় জুড়ে রোগী কোনোরকম সমস্যা ছাড়াই খুবই শান্ত এবং রিল্যাক্স ছিলেন। তার রক্তচাপ, পালস এবং শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক ছিলো। প্রত্যেক সাংবাদিক এই চিকিৎসার গুণকীর্তন করলেন। “ ইহা আসলেই আমার জন্য খুবই আনন্দের যে জীবনে প্রথম সামনাসামনি অপারেশন দেখলাম এবং ক্রায়োথেরাপি আসলেই আশ্চর্যজনক।
সিটি স্ক্যান নির্দেশ করলো যে টিউমারের পাশ আগেই জমাট বেধে গেছিলো। ইহা ঠান্ডাকরণের ২ সাইকেল পরে পরিষ্কার করা হয়। ডাক্তার এরপরে সুই বের করে আনলেন এবং অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন হল।
৬ ঘন্টা শুয়ে থাকার পর রোগী বিছানা থেকে উঠতে পারবেন, ডঃ পেং বললেন।
সাংবাদিকদের ইন্টারভিউ এর সময় ডঃ পেং বললেন, ক্রায়োথেরাপি বিস্তৃতভাবে প্রয়োগ করা যায়। ইহা সঠিকভাবে স্থাপন, কম ব্যাথা এবং ইমিউনোরেগুলেশনের সুবিধা দেয় যা টিউমারের সর্বশেষ সবুজ চিকিৎসা। যেহেতু ইহা পুরোপুরি মডার্ণ ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংঝু তে করা হয়, ইহা চিকিৎসা প্রভাব কে উন্নত করে, রোগীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করে এবং তার আয়ু বাড়ায়।