এন্ডওমেটরিয়াল ক্যান্সার
এন্ডওমেটরিয়াল ক্যান্সার কি?
এন্ডওমেটরিয়াল গ্রন্থিতে জন্মানো ম্যালিন্যান্ট টিউমারকে এন্ডওমেটরিয়াল ক্যান্সার বলা হয়। স্ত্রী প্রজননতন্ত্রের তিন ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে এটি একটি। স্ত্রী প্রজননতন্ত্রের ক্যান্সার গুলোর ভেতর এর হার ২০%-৩০% এবং মহিলাদের যেসকল ক্যান্সার হয় তার মধ্যে এর হার ৭%। যেকোনো বয়সেই এই ক্যান্সার হতে পারে তবে ৫৮-৬১ বছর বয়সে এই ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা ৫০%-৭০%। সাম্প্রতিক সময়ে গর্ভাশয়ের ক্যান্সারে থেকেও এই ক্যান্সার বেশী দেখা যায়। পরিণত পর্যায়ের এন্ডওমেটরিয়াল ক্যান্সার রোগীদের অতিরিক্ত পাঁচ বছর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ২৫%-৩০% এবং এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হল এই ক্যান্সার পুনরায় ফিরে আসে।
এই ক্যান্সার কেন হয়?
এন্ডওমেটরিয়াল ক্যান্সার এর প্রধান কারণ সম্পর্কে চিকিৎসকরা এখনও নিশ্চিত হতে পারেন নি তবে কিছু কারণ এর জন্য দায়ী হতে পারে বলে অনুমান করা হয় যেমন অনিয়ন্ত্রিত ও অতিরিক্ত সেক্স করা, মাসিক চলাকালীন সময়ে সেক্স করা, এইচ.আই.ভি. ভাইরাস এর ইনফেকশন, যৌন রোগ এবং বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমন ইত্যাদি।
কাদের এই ক্যান্সার বেশী হয়?
১) মোটা মানুষঃ শারিরিক গড়ন মোটা হলে তা এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
২) ডায়াবেটিক ঃ ডায়াবেটিক এর রোগী অথবা যাদের ব্লাডের গ্লুকোজ স্বাভাবিকের চেয়ে ২.৮ গুন বেশী তাদের এই ক্যান্সার হতে পারে।
৩) হাই ব্লাড প্রেসার ঃ হাই ব্লাড প্রেসার এর রোগীদের এই ক্যান্সার হতে পারে।
৪) অনিয়মিত মাসিকঃ যাদের মাসিক অনিয়মিত হয় তাদের এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের চেয়ে ৩ গুন বেশী।
৫) যাদের মাসিক অপ্রাপ্ত বয়সে শুরু হয় এবং অধিক বয়সে শেষ হয়ঃ যাদের ১২ বছরের আগে মাসিক শুরু হয় এবং মেনোপোজ স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ বছর পরে শেষ হয়।
৬) যাদের পলিসিসটিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম থাকে।
৭) যারা অনেক বেশী সন্তান প্রসব করেছেন অথবা কখনোই সন্তান জন্ম দেন নি তাদের এই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
৮) জরায়ুর টিউমারঃ জরায়ুতে টিউমার থাকলে তাও এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
৯) যে সব মহিলারা এস্ট্রোজেন গ্রহন করেন তাদের এই ক্যান্সার হতে পারে।
এন্ডওমেটরিয়াল ক্যান্সারের লক্ষণ কি কি ?
প্রাথমিক অবস্থায় এই ক্যান্সারের তেমন কোন লক্ষণ দেখা যায় না তবে গাইনোকোলোজিক এক্সামিনেশনে এই ক্যান্সার ধরা পড়ে। এর লক্ষণ গুলোর মধ্যে রয়েছে-
১) যৌনাঙ্গে রক্তক্ষরণ ঃ এটি এন্ডওমেটরিয়াল ক্যান্সারের প্রাথমিক এবং অত্যন্ত সাধারণ একটি লক্ষণ। এক্ষেত্রে মহিলাদের মেনোপোজের আগে হাল্কা বা ভারী অস্বাভাবিক রক্তপাত দেখা দেয় এবং তা দীর্ঘসময় ধরেও হতে পারে। মেনোপোজের পরেও এই রক্তপাত হতে পারে।
২) ভ্যাজিনাল এপেসেনোসিসঃ যোনি পথ দিয়ে ভাতের মাড়ের মত রক্ত মিশ্রিত তরল পদার্থ নির্গত হতে পারে।
৩) ব্যথাঃ পেটের নিম্নাংশে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে এবং এই ব্যথা পায়েও নেমে আসতে পারে।
৪) পরিণত পর্যায়ের রোগীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ব্যথা, পা ফুলে যাওয়া, রক্তস্বল্পতা, জ্বর, খাবারে অরুচি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
উপরের কোন লক্ষণ দেখা মাত্রই দেরি না করে পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে যেতে হবে।
এন্ডওমেটরিয়াল ক্যান্সার নির্ণয়ের কি কি পরীক্ষা আছে?
১) সেগমেন্টেড ডায়াগনোসটীক কিউরেটাজ
২) হিসটেরোস্কোপি
৩) ইউটেরিন ক্যাভিটি পিপেট
৪) আলট্রাসাউন্ড বি
এন্ডওমেটরিয়াল ক্যান্সারের বিভিন্ন ধাপঃ
ক্যান্সার ধরা পড়ার পর কার্যকর ট্রিটমেন্ট প্ল্যান প্রণয়নের জন্য ক্যান্সারের বিভিন্ন ধাপ সম্পর্কে জানা দরকার অর্থাৎ ক্যান্সার আশেপাশের প্রত্যঙ্গ গুলোতে ছড়িয়েছে কিনা, সেখানে কোন মেটাস্টাসিস আছে কি না ইত্যাদি বিষয় গুলো জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
০ ডিগ্রিঃ এই ধাপে শুধুমাত্র এডেনোম্যাটোস হাইপারপ্ল্যাসিয়া দেখা দেয় অর্থাৎ ক্যান্সার শুধুমাত্র সিটু তে থাকে।
ডিগ্রি ১ঃ ক্যান্সার কোষ শুধুমাত্র জরায়ুতে থাকে।
ডিগ্রি ২ঃ এই ধাপে ক্যান্সার গর্ভাশয়ে প্রবেশ করে।
ডিগ্রি ৩ ঃ ক্যান্সার গর্ভাশয় অতিক্রম করে যোনি পথেও ছড়িয়ে পড়ে কিন্তু নিম্নস্থ শ্রোণী বা লেসার পেল্ভিস এ তখনও পৌছায় না।
ডিগ্রি ৪ঃ এই ধাপে ক্যান্সার নিম্নস্থ শ্রোণী, মূত্রাশয় এবং মলদ্বারের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীতে ছড়িয়ে পড়ে।
এন্ডওমেটরিয়াল ক্যান্সারের কি কি চিকিৎসা আছে?
১) সার্জারিঃ এটি প্রাথমিক পর্যায়ের এন্ডওমেটরিয়াল ক্যান্সারের জন্য খুবই উপযোগী। রোগীর শারীরিক অবস্থার উপর সার্জারির ধরণ নির্ভর করে।
২) রেডিও থেরাপিঃ যাদের অপারেশন করা সম্ভব না তাদের ক্ষেত্রে রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়।
৩) কেমোথেরাপি ঃ এটি সেই সব রোগীদের জন্য প্রযোজ্য যাদের সার্জারি বা রেডিওথেরাপি দেওয়া সম্ভব হয় না অথবা যাদের সার্জারির পর আবার ক্যান্সার ফিরে এসেছে।
এন্ডওমেটরিয়াল ক্যান্সার চিকিৎসায় ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিনের ব্যবহার ঃ
বহু বছরের গবেষণায় দেখা গেছে টি.সি.এম. বা ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন মানুষের শরীরকে আরও বলবৎ করে এবং শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার মাধ্যমে ক্যান্সার চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।এছাড়াও এটি অ্যান্টি-ক্যান্সার হিসেবেও কাজ করে। ওয়েস্টার্ন মেডিসিন এর সাথে চাইনিজ মেডিসিন এর ব্যবহার চিকিৎসাকে আরও কার্যকর করে তোলে। এছাড়াও রেডিও থেরাপি এবং কেমোথেরাপির পর শরীরে জমে থাকে ক্ষতিকর পদার্থ দূরীকরণেও এটি সাহায্য করে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও বারিয়ে দেয় ফলে রোগীর জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।
আমরা কি ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকি?
বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যেসব হসপিটাল এ মাল্টিপল ডিসিপ্লিন থাকে যেমন অঙ্কসার্জারি , অঙ্কলজি, প্যাথলজি, ইমেইজলজি ইত্যাদি সহ এনেস্থেশিয়ার ডাক্তার এবং অভিজ্ঞ নার্স থাকে তাদের চিকিৎসা ব্যাবস্থা অত্যন্ত উন্নত, সাশ্রয়ী, উপযুক্ত ও কার্যকর হয়।
মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংজৌ এর “ওয়ান স্টপ” মেডিকেল সিস্টেম এ রয়েছে একাধিক মেডিকেল বিভাগের সমন্বয় যা রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোন সময় এ রোগ নির্ণয়ের সুবিধা প্রদান করে। এর ফলে ডায়াগনোসিস বা রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীকে কোন ঝামেলায় পড়তে হয়না। সুতরাং একদিকে এটি যেমন উন্নত ও আন্তরিক সব ধরনের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে তেমনি অন্য দিকে এটি চিকিৎসার কার্যকারিতা ও মান নিশ্চিত করে। ডাক্তারদের সাথে রোগীরা যাতে সহজে যোগাযোগ করতে পারেন সেজন্য এখানে বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে যেমন অনলাইন কন্সালটেশন, ই-মেইল, টেলিফোন কনভারসেশন, ফেইস টু ফেইস বা সরাসরি কন্সালটেশন এর সুবিধা। একজন ক্যান্সার রোগীকে এই ধরনের সেবা বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে থাকে। এখানকার মেডিকেল টিম বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নার্স, পুষ্টিবিদ,অনুবাদক প্রভৃতির সমন্বয়ে গঠিত যাতে যে কোন দেশের যে কোন পর্যায়ের রোগীকে আন্তরিক সেবা দেয়া সম্ভব হয়। চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে ডাক্তার এবং হসপিটাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনরূপ বাধা না থাকায় রোগীরা আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।
scrollTop